শনিবার সকাল ১১ টা। নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী পল্লী হিসেবে পরিচিত উকিলপাড়া এলাকার সমীকর মার্কেটের সামনে উৎসুক জনতার ভীড়। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় পুরো মার্কেট পুড়ে ছাই। পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে তখনও একটু একটু করে ধোয়া বের হচ্ছে। আর সেই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা।
আঞ্জুমান বেগম তাদেরই একজন। এই নারী পুড়ে যাওয়া একটি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, সকালে মালিকের ফোন পাইয়া ঘুম ভাঙসে। সে কোনো সময় ফোন দেয়না। আজকে ভোরে যখন ফোন দিসে তখনই বুকটা চিপ দিসে। ফোন ধরসি পরে কয় আগুনে সব শেষ। আমরা তো কাম করি। এক দোকানে না হইলে আরেক দোকানে যামু। তবে মালিক মহাজন তো সেইটা পারবো না। আমার মালিকের ছোট একটা দোকান আছিল, সেটাই পুড়ে গেসে।
ফরহাদ নামে আগুনে পুড়ে যাওয়া সমীকর মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ীর ছোট ভাই এ বিষয়ে বলেন, এমনও দোকান পুড়ে গেছে যেই দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। আরো যাদের দোকান পুড়েছে তাদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার দোকান ছোট কিন্তু তারপরও আমার কয়েক লাখ টাকার মাল পুড়ে গেছে। এখন তো ভাই ব্যবসার মৌসুম চলছে, তাই এরমধ্যেই এতোবড় ধাক্কা খাবো সেটা ভাবতে পারিনি। দেখি এখন যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন এ বিষয়ে বলেন, ২০ হাজার লিটার পানি ধারন ক্ষমতার বিশেষ একটি গাড়ি আছে আমাদের। আগুন নেভাতে আমরা সেই গাড়ি নিয়ে গেছি। কিন্তু যেখানে আগুন লেগেছে সেই এলাকায় তো ছোট গাড়িও প্রবেশ করতে পারেনা। তাদের নিজস্ব পানির কোনো রিজার্ভ নেই। আমরা সাথে সাথে ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে আনেক কষ্টে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। এতে আনুমানিক ৩ কোটি টাকা বা এর বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও আমরা প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছি।
জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩ টায় আগুন লেগে উকিলপাড়ার সমীকর মার্কেটের ৩০ টি দোকান পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫ টি ইউনিট কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই মার্কেটে সুতা থেকে কাপড় তৈরির কারখানা (নিটিং), থানকাপড়ের দোকান ও বেশ কয়েকটি ছোট হোসিয়ারী কারখানা ছিলো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক বছর পর পর উকিলপাড়ার বিভিন্ন মার্কেটে অসাবধানতার কারণে আগুন লাগে। আগুনের ঝুঁকি এখনো রয়েছে। এর কারণ হিসবে ব্যবসায়ী ও ফায়ার সার্বিসের কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিক এই এলাকাটিতে ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যার কারণে যুগ যুগ ধরে এখানে এমন দুর্ঘটনা হয়ে আসছে।








































আপনার মতামত লিখুন :