বয়স যখন ১০ কি ১১ তখনই স্বামী কমল রবিদাসের হাত ধরে বাবার সংসার ছেড়েছিলেন রামরতি রবিদাস। বর্তমান বয়স তার ৭০ ছুঁইছুঁই। স্বামীর সংসারে একে একে সাতটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই আর জীবিত থাকেনি। প্রত্যেকেই জন্ম হওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই মারা যায়।
গত ১৩ বছর আগে হারিয়েছেন স্বামীকেও। স্বামীর নিবাস নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকার রবিদাস পাড়ায় বসবাস করে আসছেন রামগতি। সবাইকে হারিয়ে স্বামীর ছোট কুটিরই তার আপন ঠিকানা। স্বামীর রেখে যাওয়া স্মৃতি ছোট দোকানে বসেই জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। আর সেই আয় দিয়েই চলে তার সংসার। কারও কাছে তিনি হাত পাতেন না।
এমনই একজন সংগ্রামী নারীর পাশে এগিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বসুন্ধরা শুভসংঘ। শুভ কাজে সবার পাশে স্লোগানকে সামনে রেখে শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে রামগতি রবিদাসের হাতে তুলে দিয়েছেন বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। সেই সাথে তুলে দিয়েছেন নগদ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রামরতি রবিদাসের কর্মস্থল চাষাঢ়া হকার্স মার্কেটের সামনে গিয়ে তার হাতে এই উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
আর এই উপহার সামগ্রী পেয়ে রামগতি রবিদাসও বেজায় খুশি। তিনি বলেন, “জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। স্বামী-সন্তান কাউকেই আর নেই পাশে। তবুও ভিক্ষা না করে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে চেয়েছি। আজ বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার খবর নিয়েছে, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি দোয়া করি ওরা যেন সবসময় মানুষের পাশে থাকতে পারে।”
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মোহাম্মদ শহীদ বলেন, বসুন্ধরা শুভ সংঘের পক্ষ থেকে একজন নারীকে পূজাসামগ্রী উপহার দিয়েছে। এটা খুবই ভালো কাজ। বসুন্ধরা শুভ সংঘ সবসময় ভালো কাজ করে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বসুন্ধরা শুভ সংঘের প্রকাশনা সম্পাদক মো. আল মনির বলেন, বসুন্ধরা দীর্ঘদিন ধরে অসহায় দ্স্থু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আমরা একজন বৃদ্ধ নারীর পাশে এগিয়ে এসেছি। যে নারী ভিক্ষা না করে এখনও কর্ম করে খাচ্ছে। তিনি জুতা সেলাইকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আমরা তার পেশাকে সম্মান করি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বসুন্ধরা শুভ সংঘের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মামুন বলেন, শুভ কাজে সবার পাশে স্লোগানকে সামনে রেখে বসুন্ধরা শুভ সংঘের উদ্যোগে আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা অসহায় বয়স্ক নারীর পাশে দাঁড়িয়েছি পূজা সামগ্রী নিয়ে। তার স্বামী সন্তান কেউ নেই। তিনি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমরা তাকে পণ্য সামগ্রী নিয়ে সহযোগিতার করার চেষ্টা করেছি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম রাজু, নিউজ টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি শরীফ সুমন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণ, ডা. ফারুক হোসেন, সহ-সভাপতি আকরামুজ্জামান, আশরাফুল ইসলাম টুকু, কামাল হোসেন কালিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বীপ বাপ্পী, জাবেদ কায়সার মিশু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী মনজুর বকুল, সমাজসেবা সম্পাদক রাজু আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এসএম রাসেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মনজুর আহমেদ আকাশ, সাংবাদিক মেহেদী হাসান সজীব ও মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :