নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি তোলারাম কলেজে গিয়ে বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরী করেছে। ঘটনাটি নিয়ে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
১১ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উদ্যোক্তা সম্মেলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হন হাতেম। ছাত্রদল নেতারা তাকে বেরিয়ে যেতে বললে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেন তিনি। এরপরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বিষয়ে বক্তব্য দেন এবং ঘটনা বর্ননা করেন। এর নেপথ্যে কারও ইন্ধন রয়েছে বলেও সন্দেহ করেছেন তিনি। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ বিরোধী পক্ষ ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও বিএনপিরই একাংশের কিছু নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ এই ঘটনা ঘটানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন।
হাতেমের ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ফের প্রচার করা হয়েছে জুলাই আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার সামনে হাতেম যেই বক্তব্য দিয়েছিলেন। এনিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেসময় বক্তব্য রেখেছিলেন হাতেম। তবে বিরোধী পক্ষ কিছুতেই এই যুক্তি মানতে নারাজ।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্য, “মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাই ছাত্রদলের তরুণরা ক্ষুব্ধ হয়েছে, এটা অস্বাভাবিক নয়। সে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন নেতাকে ম্যানেজ করে নারায়ণগঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি জামায়াতের কিছু নেতারাও তাকে মৌন সমর্থন দিচ্ছে। এভাবেই সে ৫ আগস্টের পর ফের পুনর্বাসিত হয়েছে ব্যবসায়ী নেতা পরিচয়ে। অথচ সে ছিলো সেলিম ওসমানের সবচেয়ে ঘনিষ্টজনদের একজন।”
তবে বিএনপির অপর একটি অংশ মনে করছে, “এই ধরনের আচরণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। একজন শিল্পনেতাকে অপমান করা রাজনৈতিকভাবে শোভন নয়। তাছাড়া নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ী মহলকে ক্ষুব্ধ করে তুললে তা বিএনপির জন্য সমস্যার কারন হতে পারে। বিএনপিপন্থী বহু নেতার সাথে হাতেমের রয়েছে সুসম্পর্ক। ফলে হাতেমকে কিছুটা ছাড় দেয়া উচিৎ ছিলো বলে মনে করছেন তারা।”
ঘটনার বিষয়ে হাতেম সংবাদকর্মীদের বলেন, নারায়ণগঞ্জ লোকাল বিএনপির কেউ ছাত্রদলের কিছু ছেলে পাঠিয়ে সিনক্রিয়েট করেছে। তারা কোনো আক্রমণ করেননি। তখন প্রোগ্রাম শেষের দিকে, আমি বের হবো। তখন ছাত্রদলের কয়েকজন ঢুকে আমাকে ফ্যাসিস্ট ও আওয়ামী লীগের দোসর বলতে থাকে। যার নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে, সে আমার সম্পর্কে কিছু জানেই না। কেউ হয়তো ইনটেনশনালি তাদের পাঠিয়েছে।'
এদিকে তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ঘটনার পর তার উপর চাপ আসছে বলে দাবী করেন গণমাধ্যমের কাছে। ঘটনার ঠিক পরদিনই এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন মনির হোসেন জিয়া। তিনি বলেন, ‘আবেগপ্রবন হয়ে তাকে কলেজ থেকে চলে যেতে বলেছি। সম্মানিত ব্যক্তির সাথে এই ধরণের আচরণ কাম্য না। এই ঘটনায় হাতেম সাহেব সহ সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম রাজীব বলেন, তোলারাম কলেজে এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এটা আমাদের ছাত্রদলের কোন দলীয় সিদ্ধান্ত না। যারাই এই কাজ করেছেন তারা স্বপ্রণেদিত হয়ে করেছেন। ওনার ব্যাপারে একটা নেগেটিভ প্রচারণা আছে, যা ছাত্রদলের নেতাদের মাইন্ড সেটাপে ঢুকে যাওয়ার কারণেই তারা এই কাজ করেছেন।
এ ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতারা দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেউ ছাত্রদলের পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ বলছেন, “এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, যা দলের জন্য বিব্রতকর।”








































আপনার মতামত লিখুন :