News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২

জটিল সমীকরণে নারায়ণগঞ্জ-৪


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ১০:০৮ পিএম জটিল সমীকরণে নারায়ণগঞ্জ-৪

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনীতির তাপমাত্রা বাড়ছে নারায়ণগঞ্জের মাঠে। জেলায় প্রতিটি আসন নিয়েই আলোচনা থাকলেও সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে। কারণ এখানে তৈরি হয়েছে এমন এক রাজনৈতিক সমীকরণ যা একই সঙ্গে জটিল, আকর্ষণীয় এবং অনিশ্চিত।

আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে বিএনপি জেলায় অন্য আসনগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও, ফতুল্লা আসন নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। দলের ভেতরে ভাসছে নানা গুঞ্জন এবারও হয়তো বিএনপি জোটগত কৌশলের অংশ হিসেবে আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেমনটি হয়েছিল, তেমনি এবারও একই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তখন জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী বিএনপির সমর্থন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এবারও যদি ইতিহাস পুনরায় রচিত হয়, তাহলে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থীরা স্বতন্ত্র পথে লড়াইয়ের চিন্তা করবেন এমন ধারণা করছেন অনেকে। কারণ এই আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শাহ আলম, আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি এবং শহীদুল ইসলাম টিটু।

দলীয় ভেতরের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত দুটি নাম শাহ আলম ও গিয়াস উদ্দিন। ২০০১ সালের নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন বিএনপির প্রার্থী হয়ে এই আসন থেকে জয় পেয়েছিলেন। অপরদিকে স্থানীয় হিসেবে শাহ আলমের রয়েছে একনিষ্ঠ অনুসারী ও শক্তিশালী জনভিত্তি। সাম্প্রতিক সীমানা পুননির্ধারণে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা বাদ পড়ায় ফতুল্লা-কেন্দ্রিক নতুন সীমারেখা শাহ আলমের পক্ষে নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করেছে।

দলের একাংশের অভিযোগ, বহুদিন ধরে এই আসনের নেতাকর্মীদের প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উদাসীন। এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বারবার আমরা অবহেলিত হচ্ছি। দলের সিদ্ধান্তহীনতায় মাঠের নেতাকর্মীরা হতাশ।”

তবে ভেতরের অন্দরে নড়াচড়া শুরু হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দলটির উচ্চপর্যায় থেকে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। যদি জমিয়তের মনির হোসেন কাসেমী শেষ পর্যন্ত খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে না নামেন, তাহলে ধানের শীষ প্রতীকটি গিয়াস উদ্দিনের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

অন্যদিকে শাহ আলমও থেমে নেই। তিনি ইতোমধ্যে নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন, ধারাবাহিকভাবে সভা, দোয়া মাহফিল, গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি, যিনি সংগঠনের নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় এসেছেন।

সব মিলিয়ে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখন এক রহস্যময় রাজনৈতিক সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত জোটের স্বার্থে প্রার্থী ঘোষণা না করে, তাহলে শাহ আলম, গিয়াস উদ্দিন কিংবা অন্য কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে গড়ে উঠবে এক বহুমাত্রিক লড়াই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু ভোটের নয় বরং তা হবে নেতৃত্ব, কৌশল ও দলীয় আস্থারও এক কঠিন পরীক্ষার ময়দান।

Islam's Group