নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ শাহ আলম যিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। কিন্তু বারবার নির্বাচনী সমীকরণে তাকে পিছনে টেলে দেয়া হয়। এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় তার জনপ্রিয় অবস্থান ধরে রেখেছেন।
বরং আগের চেয়ে তিনি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তার নির্বাচনী এলাকায়। কারণ গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী নেতারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসলেও শাহ আলম ছিলেন একেবারেই প্রভাবমুক্ত। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো রকমের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করতে পারবে না। একই সাথে বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হলেও শাহ আলমের বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে পারবে না।
পাশাপাশি শাহ আলমের কোনো বাহিনী নেই। তার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী। অথচ বর্তমানে এমন কোনো নেতা পাওয়া যাবে না যার কোনো বাহিনী নেই। নেতারা যেখানেই গিয়ে থাকেন সেই সাথেই তার বাহিনী ঘিরে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একবারেই ব্যতিক্রম শাহ আলম। আর এজন্যই নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় তার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। সেই সাথে সংসদ সদস্য পদে জয়ী হওয়ার মতো তার অবস্থাও রয়েছে।
এরই মধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যেখানে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে প্রার্থীর নাম রয়েছে। ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু এই তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থীর নাম নেই।
অনেকেই ধরে নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির শরীক দলের প্রার্থীর জন্য ছাড় দেয়া হবে। আর এই ছাড় দেয়া হলে মোহাম্মদ শাহ আলমের বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু তার জনপ্রিয়তার কারণে ফতুল্লা এলাকার মানুষ চাচ্ছেন স্বতন্ত্রভাবে হলে ভোটের লড়াইয়ে থাকার জন্য। আর যদি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থেকে যান তাহলে হয়তো তিনি বাজিমাত করবেন।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। সেই সাথে সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারেও আলাপ আলোচনা শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতকায় নারায়ণগঞ্জের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিজেদের নানানভাবে জানান দিয়ে আসছিলেন।
একই সাথে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন করা হয়। তবে পরের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ ছিল শুধুমাত্র সোনারগাঁও নিয়ে।
সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা ও সদর থানার দুটি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলীরটেক।
আর এই আসন পুনর্বিন্যাসের পর থেকেই শাহ আলম বেশ জোরেশোরে নিজেকে জানান দিতে শুরু করেছেন। সেই সাথে বিভিন্ন সভা সামবেশের মধ্য দিয়ে নিজেকে জানান দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সাথেও আগের থেকে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহ আলমের উদ্যোগে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। আফিয়া জালাল ফাউন্ডেশন ও জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এসক মেডিকেল ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল বক্তব্য হচ্ছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহ আলম কিছুদিন পরপরই নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যাণে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি অনেকদিন ধরেই বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে আসছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। তিনি যে কোনো প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহ আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও নাটকীয়ভাবে শেষ মুহূর্তে এসে ২০-দলীয় জোটের উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মনির হোসেন কাসেমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো।
তার আগে, ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।








































আপনার মতামত লিখুন :