নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা। রাজনৈতিক ময়দানে তার ব্যাপক পরিচিতি থাকায় টানা তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নিজ এলাকার অঘোষিত রাজার ভূমিকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখল বানিজ্যের মাধ্যমে স্থানীয়দের মুখে তিনি ভূমিদস্যু রুহুল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন। স্বৈরাচার আমলে ক্ষমতার দাপটে গড়ে তোলা বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে বর্তমানে পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর বাস করছে। আর সেখানে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছেন।
রুহুল আমিন মোল্লা কাউন্সিলরের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্যের পদে আছেন। দীর্ঘ লম্বা সময়ে লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকায় দলীয়ভাবে তার প্রভাবটা তুলনামূলক অন্যান্য কাউন্সিলরের চেয়ে কিছুটা বেশিই। তবে রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি নেতা কিংবা ছায়া পরিবর্তনের মাধ্যমে সমালোচিতও হয়েছেন। একসময় সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিশ্বস্ত মানুষ থাকলেও ২০১৬ সাল পরবর্তীতে নিজ স্বার্থে আঘাত পড়ায় আইভীকে ছেড়ে শামীম ওসমানের বলয়ে ঢুকেছেন। এরপর থেকেই যেকোনো বক্তৃতায় আইভীর বদনামে একহাত আর ওসমানকে সাধুবাদ করতে দেখা গেছে তাকে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হবার মাধ্যমে আইভীর সঙ্গে রুহুলের সখ্যতা বাড়ে। ওই নির্বাচনের পর হতে ওসমান বিদ্বেষের সুরে আইভীকে খুশির মাধ্যমে নিজের অবস্থান পোক্ত করে ২০১৬ সালে ফের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। তবে এই নির্বাচনের পর মেয়রের সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল ধরে ওসমান বলয়ে ঢুকে যান রুহুল। যার মূল কারণ হচ্ছে প্যানেল মেয়র না বানানো।
আওয়ামী নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, দ্বিতীয়বার কাউন্সিলর হতেই আইভীর কাছে প্যানেল মেয়রের আবদার রাখেন রুহুল আমিন মোল্লা। তবে তার আবদারে সাড়া না দেওয়ায় আইভীকে রেখে ওসমানের দারস্থ হন। আর ঠিক তখন থেকেই শামীম বলয়ে নিজের অবস্থান তৈরিতে পরিশ্রমে নেমে যায়। এরপর থেকে ওসমানের ডাকা যেকোনো কর্মসূচি কিংবা প্রোগ্রামে নিজের জনশক্তির পরিক্ষায় শক্ত অবস্থান তৈরিতে সাফল্য অর্জনও করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিন মোল্লা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবার পর থেকে নিজ ওয়ার্ডের জমিজমা,ঝুট ব্যবসা, ডিস-ওয়াইফাইসহ সর্বসেক্টর নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর তিনি যে সম্পদ গড়েছেন তা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, এই নেতার সম্পদের অধিকাংশই বিদেশের মাটিতে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে রুহুলের সহধর্মিণী সিঙ্গাপুরের সিটিজেন। নিজের স্ত্রী সিঙ্গাপুরের হবার সুবাদে তিনি দেশের চেয়ে সিঙ্গাপুরেই বেশি সম্পদ গড়েছেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, ৮নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ হতে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাও রুহুলের ভূমিদস্যুতার শিকার হয়েছে। কখনো মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল আবার কখনো গণমাধ্যম কর্মীর ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় বিতর্কিত এই নেতা।
ইমরান নামের এক গণমাধ্যম কর্মীর ডিস ব্যবসা দখল নিতে তাকে বেধড়ক মারধর করে একপর্যায়ে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানিও করা হয়েছিল। যা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এছাড়াও এলাকাজুড়ে মাদকের কারবার সরাসরি তার পরিবার হতেই নিয়ন্ত্রিত ছিল। রুহুল আমিন মোল্লার আপন বড় ভাই খোকন মোল্লা নিজে ওই ওয়ার্ডের চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবাসায়ী। মাদকের বেচাবিক্রিকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার হাতেনাতে আটক হয়ে জেল হাজত খেটেছেন খোকন।
গতবছর ৫ আগস্টের আগে অর্থাৎ জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে রুহুল নিজ এলাকার সাধারণ শিক্ষার্থী, বিরোধী মতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হামলা-মামলায় বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশনায় আন্দোলনের সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চিটাগাংরোড রোড হতে সাইনবোর্ড ও জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ডের আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে দেশী-বিদেশী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতনে হলে রুহুলও আত্মগোপনে চলে যান এবং একপর্যায়ে সে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমিয়েছেন।








































আপনার মতামত লিখুন :