News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভিন্নমত দমনের ঘোষণা মব সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে : বজলুর রশীদ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম ভিন্নমত দমনের ঘোষণা মব সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে  : বজলুর রশীদ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রয়াত জাহেদুল হক মিলু’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার ১৩জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে দলীর কার্যালয়ে উক্ত স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩জুন মিলু সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেন। 

স্মরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। জেলা বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জেলার আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক নাছিমা সরদার। আলোচনার পূর্বে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং জাহেদুল হক মিলুর প্রতিকৃতিতে জেলা বাসদ, শ্রমিক ফ্রন্ট, ছাত্র ফ্রন্ট, মহিলা ফোরাম ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এদেশের বিপ্লবী আন্দোলনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কমরেড জাহেদুল হক মিলু। মিলু ছিলেন আমৃত্যু বিপ্লবী। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুক্ত থেকে সারা দেশে বিশেষত উত্তরবঙ্গে আমাদের দল ও মেহনতি মানুষের সংগ্রামকে বিকশিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দল ও বিপ্লবের স্বার্থই তার কাছে ছিল সর্বাগ্রে। রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে গিয়ে নানা সময়ে শাসকদের নানা আক্রমণ, নির্যাতন-নিপীড়ন তিনি যেমনি হাসিমুখে বরণ করেছেন তেমনি দলের মধ্যেও নানা সমালোচনাকে তিনি খোলা মনে গ্রহণ করে নিজেকে প্রতি মুহুর্তে একজন সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রাম করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই লড়াইয়ে ছিলেন অবিচল। সকল রকমের অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা থেকে মুক্ত কমরেড মিলুর চরিত্র এদেশের তরুণ বিপ্লবীদের জন্য জ্বাজ্জল্যমান শিক্ষা হয়ে আছে। নিজের স্বার্থকে কীভাবে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে একাত্ম করে দেয়া যায় মিলু তার অনন্য উদাহরণ । মার্কসবাদী দর্শনকে জীবনদর্শন হিসেবে ধারণ করে শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।  

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আজ যখন আমরা এই স্মরণসভা করছি গোটা দেশের মানুষ তখন নানাবিধ সংকটে জর্জরিত। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শ্রমজীবীদের নাগালের বাইরে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ চরম সংকটে দিনাতিপাত করছে। এ সময় বেকারত্ব বেড়েছে, অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে । মব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি চলছে, মানুষের জীবনে স্বস্তি নেই। ঈদের আগের দিনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসব কথার লেশমাত্র নেই। তিনি রাখাইনে করিডোর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রামের বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে যেসব কথার অবতারণা করেছেন তা কোন দেশ প্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি তিনি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাস’ কেই উস্কে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোন পদে থেকে এ ধরনের উস্কানি জনগণ গ্রহণ করবে না। বরং প্রত্যাখ্যান করবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক। এই বন্দর বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়া অর্থ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর আঘাত হানার পথ পরিষ্কার করা। ইতিমধ্যে দেশের বামপন্থী গণতান্ত্রিক দল ও দেশপ্রেমিকসমূহ সরকারের এই পদক্ষেপ রুখে দাঁড়াতে আগামী ২৭ ও ২৮শে জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোন হুমকি ধামকি দিয়ে এই কর্মসূচি থেকে দেশ প্রেমিক জনগণকে পিছু হাটানো যাবে না।

ফিরোজ বলেন, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিল নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি সার্বিক বিবেচনায় ঐ সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা মনে করি এ বছরের মধ্যেই এটি ভালোভাবে সম্ভব। এ সময় ২০২৪ এ জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করাও সম্ভব। কোন অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোন দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ফেলতে পারে। নেতৃবৃন্দ বলেন, ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন তা বোধগম্য না। বাস্তবে অধিকাংশ দল ও জনগণের মতকে উপেক্ষা করে বিশেষ দল-গোষ্ঠীর স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ড. ইউনুস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

তিনি ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের ভাষণকে সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার বিশেষ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হিসেবে উল্লেখ করে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন ঘোষণা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে বিরোধী যে কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকল বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানান।

Islam's Group