অনুসারীদের শায়েস্তা করছেন জাকির খান

নিজের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্তদের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নেমেছেন আলোচিত নেতা জাকির খান। সম্প্রতি তিনি শহরের কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়ে তার ছবি সম্বলিত অফিস তালা দিয়েছে। এছাড়া তার নাম ব্যবহার করে মুঠোফোনে বিভিন্নজনের কাছে চাঁদাবাজীর ঘটনায় পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান রেখেছেন।

জাকির খানের নামে শহরে ফুটপাত, বাস টার্মিনাল ও খেয়াঘাটে চাঁদাবাজি দখলবাজীতে চটেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট ও বাস টার্মিনালে জাকির খানকে তৎপর হতে দেখা গেছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট প্রবেশপথে জনসাধারণ চলাচলে রাস্তায় অবৈধ হকার বসিয়ে মোটা অংকে লেনদেন করা হত। ওই ভাগে জাকির খানের নামে উত্তোলন করা হত গুঞ্জন উঠে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খেয়াঘাটে জাকির খানের ছবি সম্বলিত সকল পোস্টার ছিড়ে ফেলেন তিনি। আকস্মিক তিনি ঘাটে হাজির হয়ে লোকজনকে এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। একই সাথে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে তার নামে দখলকৃত কয়েক অফিসও দখলমুক্ত করা হয়।

শুক্রবার ব্যস্ততম দিনে শহর-বন্দর পারাপারকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ হকারমুক্ত পরিবেশে অবাক হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখন অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ায় জাকির খানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমন উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য জোরারো দাবি জানায়।

জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে জাকির খান এই ঘাট পরিচালনা দায়িত্ব পালন নিতে যাচ্ছেন। তার পক্ষে দিদার খন্দকার ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা পেয়েছেন।

জানা গেছে, শহরের ২নং রেলগেইট ও ডিআইটি এলাকায় জাকির খানের নাম ভেঙ্গে হকার বসিয়ে চাঁদা উঠানো হয় এমন আলোচনা রয়েছে। বিগত আমলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মোটা অংকে ভাগবাটোয়ারা করা হত। পটপরিবর্তনের সাথে সাথে এখন জাকির খান নাম ভেঙ্গে একটি চক্র এখন উত্তোলন করা হয় বলে গুঞ্জন উঠে। এমন ঘটনাও তিনি এবার তৎপর হয়েছেন বলে জাকির খানের একাধিক সমর্থকরা জানিয়েছেন। ‘হ্যালো গাইস’ ব্যবহার করে কেউ যেন জাকির খানের নাম ভেঙ্গে চাঁদা তুলতে না পারে কঠোর বার্তা দিয়েছেন তিনি।

গত ৩০ মে আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের নাম ব্যবহার করে চাঁদা দাবি ও হুমকি দেওয়ার একটি অডিও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে চাঁদা দাবি করা ফোনালাপের ব্যক্তিটি জাকির খানের নয় বলে জানিয়েছেন জাকির খানের পক্ষের আইনজীবী রাজিব মন্ডল। সম্প্রতি এ ঘটনায় এক মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি অডিও কল রেকর্ড ভাইরাল হয়।

কল রেকর্ডে নারাণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান পরিচয় দিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এক অজ্ঞাত ব্যবসায়ীকে ফোন করে বলেন, ‘৫ মিনিটের মধ্যে তুই আমার বাসায় না এলে আমার পোলাপান তোর বাসায় যাবে। তুই চ্যালেঞ্জ করছস না আমার সঙ্গে। তোকে দেখি ওরা বাঁচাইতে পারে কিনা। তোকে আমি দেখতেছি। তুই ৫ মিনিটের মধ্যে আয়, তোর টাকা লাগবে না। তারপর দেখ তোকে কী করি। তুই মনে করছস কে বা কারা ফোন দিছে। আমি তোকে দেখতেছি।’ এর প্রতি উত্তরে ফোনের ওপাশে থাকা অজ্ঞাত ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার জাকির ভাই ২০ হাজার টাকা নেওয়ার লোক না। চাষাঢ়ায় তো অনেক জ্যাম, আমার আসতে সময় লাগবে। আমি একটু পরে আসতেছি।’

৪ জুন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন আইনজীবী রাজিব মণ্ডলসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে জাকির খানের পক্ষের আইনজীবী রাজিব মণ্ডল বলেন, ভাইরাল হওয়া অডিও কল রেকর্ডের ব্যক্তিটি জাকির খান নয়। কে বা কারা তার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এ ধরনের কাজ করছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, এ বিষয় নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।