বাবা- একটি শব্দ, যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজারো শাসন, বারণ, ভয়, ভালোবাসা আর নির্ভরতার এক অদৃশ্য বন্ধন। সন্তান জন্মের পর থেকেই যিনি বটগাছের মতো বিস্তার করে রাখেন নিরাপত্তার ছায়া, তিনিই তো বাবা। তাঁর হাত ধরেই সন্তানেরা এক পা, দুই পা করে হাঁটতে শেখে, স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার।
বাবা মানেই- নিজের ক্ষুধা আর তৃষ্ণাকে পাশে সরিয়ে রেখে সন্তানের স্বস্তির জন্য ছুটে চলা। বাবা মানে- সাফল্যের আড়ালে থাকা এক নিরব মহানায়ক, যাঁর প্রতিটি নিঃশ্বাসে থাকে সন্তানের জন্য অদৃশ্য ভালোবাসার আশ্বাস: ‘‘তুমি নির্ভয়ে থাকো, আমি আছি পাশে।’’
পিতৃত্ব কেবল আর্থিক দায়িত্ব নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নিঃস্বার্থ প্রেম, আত্মত্যাগ আর অগাধ সহানুভূতি। 'বিশ্ব বাবা দিবস'- এই দিনটি শুধু উদযাপন নয়, এটি একজন বাবার প্রতি সন্তানের গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন।
বিশ্বে প্রথম বাবা দিবস পালিত হয় ১৯০৮ সালের ৫ জুন, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের একটি গির্জায়। এরপর ১৯০৯ সালের ১৯ জুন, সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক মহীয়সী নারী নিজ উদ্যোগে এই দিনটি পালন করেন, যদিও আগের বছরের আয়োজনে তাঁর কোনো জানা ছিল না।
১৯১৩ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে ‘বাবা দিবস’কে জাতীয় ছুটির দিনে রূপান্তরের প্রস্তাব ওঠে। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ এর সমর্থন জানান, এবং ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাবা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের ১১১ টিরও বেশি দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালন করা হয় বাবা দিবস।
বাবা, যিনি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেন শুধুমাত্র সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য- আমরা কি পারি তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে? যাঁর হাত ধরে জীবনের পথে চলা শুরু, জীবনের শেষভাগে তাঁর হাতটি আমরা কি ধরে রাখতে পারি না?
বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, তাঁর স্বপ্ন সন্তানের সুখ। অথচ, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাবার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রম! এই কি তাঁর প্রাপ্য? এই বাবা দিবসে হোক এই প্রতিজ্ঞা কোনো বাবার শেষ আশ্রয় যেন না হয় বৃদ্ধাশ্রম। যে আদর, যে যত্নে বাবা বড় করেছেন সন্তানকে, শেষ বয়সে সেই যত্নই যেন তিনি ফিরে পান সন্তানের কাছ থেকে।
ভালো থাকুন পৃথিবীর সকল বাবা।
আপনার মতামত লিখুন :