News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিচ্ছে বিএনপি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিচ্ছে বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর বিএনপির অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রধান আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। অনেক সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপদ রাখতে গিয়ে নিজ দল বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন নিপীড়ন করা হচ্ছে। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীদের লাশও পড়ছে।

সবশেষ রূপগঞ্জে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ মামুন হোসেন ভূঁইয়ার (৩২) মৃত্যু হয়েছে। গত ১০ জুন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত মামুন হোসেন ভূঁইয়া রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে। তার বড়ভাই ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হোসেন।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বিকেলে মাঝিপাড়া এলাকায় ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন খোকাকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। সেখানে যুবদল নেতা বাদলের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাকে বাদলের বাড়ির দিকে নেওয়ার পথে হামলা চালায় সাবেক ছাত্রদল নেতা জায়েদুল ইসলাম বাবু ও তার লোকজন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় সাবেক ছাত্রদল নেতা বাবু ও সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান। তখন ছোট ভাই মামুন গুলিবিদ্ধ হন বলে অভিযোগ করেন যুবদল নেতা বাদল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাবু ছাত্রলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে আমার বাড়ির সামনে এসে ফায়ার করে। আমার ছোটভাই তখন গুলিবিদ্ধ হয়। রাতে ভাইটা মারা গেছে।’

জায়েদুল ইসলাম বাবু নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী। সেই সাথে তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা। আর মাহবুবুর রহমান বর্তমানে কাজী মনিরুজ্জামানের একনিষ্ঠ নেতা হিসেবে কাজ করছেন। কাজী মনিরুজ্জামানের যে কোনো কর্মকান্ডে প্রধান ভূমিকায় থাকেন মাহবুবুর রহমান।

এর আগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী স্লুইচগেইট এলাকা থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজীর আহম্মেদ খান রিয়াজকে আটক করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মী আহত হন। যুবদল নেতাদের অভিযোগ ছিলো হামলাকারীরা ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের অনুসারী।

এ বিষয়ে তারাব পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক আফজাল কবির বলেন, গ্রেফতার ছাত্রলীগ সভাপতি তানজীর আহম্মেদ রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘঠিত হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পূর্বে তিনি ২০২১ সালে আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর মামলারও আসামি ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত কিছুদিন ধরে তিনি তার শ্বশুরবাড়ি রূপসী স্লুইচগেইট এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে আমরা খবর পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে কাজী মনিরের লোকজন আমাদের এবং পুলিশকে বাধা দেন। এ নিয়ে হাতাহাতির একপর্যায়ে কাজী মনিরের অনুসারী মাহমুদুল হাসান, জয়, রাজনসহ ১০০-২০০ জন লোক আমাদের উপর হামলা করেন। হামলায় তারাব পৌর যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আরিফুর রহমান আরিফ, যুবদল নেতা রাসেল ভুঁইয়া, সাইফুল ইসলাম, কাউছার, ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি জুয়েল, ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আমাদের ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাই।

সূত্র বলছে, বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে নেতাকর্মী ও লোকবল হারিয়ে একজন ব্যর্থ নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ‘ডেড হর্স তথা মৃত ঘোড়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলো। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অনেকটা অঘোষিতভাবেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছেন। অনেক নিস্ক্রীয় থাকা নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কাজী মনিরুজ্জামান।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা তৃণমূল বিএনপির আহবায়ক পদে দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ আলী মেম্বার। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে থাকা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে মোহাম্মদ আলী মেম্বার তার সকল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। তিনি তৃণমূল বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন এবং তার ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ পতনের পর মোহাম্মদ আলী মেম্বার তৃণমূল বিএনপি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। সেই সাথে তার ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে আসেন। একই সাথে তারা দুইভাই মিলে কাজী মনিরুজ্জামানের আশ্রয়ে গিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য তাদের দখলে নিয়েছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা তারাবো ইউনিয়নের সাবেক চেযারম্যান মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগ দেওয়ান মোহাম্মদ ও আলী আহম্মেদ বাবেক এমপি গোলাম দস্তগীর আশ্রয়ে ছিলেন। গোলাম দস্তগীর গাজী আশ্রয়ে থেকে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়েছেন।

এবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তারা সকলেই কাজী মনিরুজ্জামানের বলয়ে ফিরেছেন। সেই সাথে কাজী মনিরুজ্জামান নিজের বলয়কে ভারী করার জন্য তাদের সাদরে গ্রহণ করছেন। এভাবে তাদের মতো আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে কাজী মনিরের আশ্রয়ে রয়েছেন।

নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা তিন মেয়াদ শেষে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার। আর দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। যাদের তালিকায় অন্যতম ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। রাজনীতিতে তার দেখা মিলতো না। সেই সাথে তিনি তার অনেক অনুসারীদের কাছ থেকেও বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মনিরুজ্জামানও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। তার অনুসারী নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন সভা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামান স্থানীয় ও জেলার রাজনীতিতে কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই রাজনীতিকে অনেকটা গুডবাই জানান তিনি। পরে তাকে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। মুচলেকা দেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুরোদমে আবারও রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন কাজী মনিরুজ্জামান। আর এই রাজনীতিতে ফিরতে গিয়ে নিজ দল বিএনপির নেতাকর্মীদের লাশ ফেলছেন তার অনুসারীরা।

Islam's Group