News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

কাশেমীর হাতে উঠবে ধানের শীষ!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম কাশেমীর হাতে উঠবে ধানের শীষ!

দীর্ঘ প্রতীক্ষা, গুঞ্জন আর অনিশ্চয়তার পর অবশেষে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতিতে অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় এই আসনে দলীয় নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে চাপা উত্তেজনা। তবে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে কে পাচ্ছেন বহুল প্রত্যাশিত ধানের শীষ।

এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ির কারণে রাজনৈতিক জোটগুলোর সমীকরণে এসেছে নতুন বাস্তবতা। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলগুলোকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। ফলে বিএনপির জোটসঙ্গী দলগুলোর অনেক তারকা প্রার্থী ধানের শীষে ভোট করার সুযোগ হারাচ্ছেন। এই বাস্তবতায় জোট রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন চমক ও সমঝোতার জটিল হিসাব।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, জোটের কিছু প্রভাবশালী নেতা শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামতে পারেন। ইতোমধ্যে এমন আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সমঝোতা কার্যকর হলে বিএনপি ও তার শরিকদের মধ্যকার মনোমালিন্যের যে কালোছায়া দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটাই কেটে যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মনির হোসাইন কাসেমীর ভূমিকা ঘিরে চলছে নানা জল্পনা। রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের বৃহত্তর সমীকরণে তিনি খেজুর গাছ প্রতীক ছেড়ে ধানের শীষে নির্বাচন করলে তা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। তবে এমনটা হলে বিএনপির নিজস্ব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কপাল পুড়তে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, মনির হোসাইন কাসেমী যদি শেষ পর্যন্ত নিজ দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ নিয়ে নির্বাচনে না নামেন, তাহলে ধানের শীষ প্রতীকটি বিএনপির ঘরেই থাকার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সে সময় জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী বিএনপির সমর্থনে মাঠে নেমেছিলেন এবং আসনটির রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলেন।

এবারও যদি একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে বিএনপির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামার চিন্তা করতে পারেন এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ এবং প্রভাবশালী। এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শাহ আলম, আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মোহাম্মদ আলী, যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি এবং শহীদুল ইসলাম টিটু। দলীয় অন্দরমহলের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম দুটি শাহ আলম ও মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনীতিতে শাহ আলমের রয়েছে শক্ত অবস্থান ও নিবেদিত কর্মীসমর্থক। সাম্প্রতিক সীমানা পুনর্র্নিধারণে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা বাদ পড়ে ফতুল্লাকেন্দ্রিক নতুন নির্বাচনী মানচিত্র তৈরি হওয়ায় রাজনৈতিক ভারসাম্য অনেকটাই শাহ আলমের অনুকূলে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

দলীয় একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই আসনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবহেলার শিকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বারবার আমরা উপেক্ষিত হচ্ছি। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মাঠের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে।” তবে এসব সমালোচনার মধ্যেও থেমে নেই শাহ আলম। তিনি ইতোমধ্যে নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। ধারাবাহিক সভা, দোয়া মাহফিল, গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি, যিনি সংগঠনের নতুন ও কর্মচঞ্চল মুখ হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন।

সব মিলিয়ে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখন এক রহস্যময় ও বহুমাত্রিক রাজনৈতিক সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দু। বিএনপি শেষ পর্যন্ত জোটের স্বার্থে কাকে ছাড় দেবে, আর কাকে হাতে তুলে দেবে ধানের শীষ—তা জানতে অপেক্ষা আর মাত্র এক সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কার নামেই শেষ পর্যন্ত থামে দীর্ঘ প্রতীক্ষার রাজনীতি।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group