নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শুরুতেই ছিল ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রবল আপত্তি। রাজনীতির ময়দানে না থাকার পরেও শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণার পর ত্যাগীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তার পরেও দলের সিদ্ধান্ত যখন অনেকেই মেনে নিয়ে মাঠে নামেন তখন নানা অজুহাতে নির্বাচন থেকে সরে যান এ শিল্পপতি। আকাশ ভেঙে পড়ে অনুসারীদের মধ্যে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এ নিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যোগ্য প্রার্থীতা বাছাইয়ে হয়তো বিএনপির কোন ভুল ছিল। এখন একজন প্রার্থী সরে যাওয়াটা দলের জন্য অসম্মানজনক। তিনি নিজে যেমন নিজের তরী ডুবিয়েছেন তেমিন বিএনপিকেও ডুবাচ্ছেন। কারণ মাসুদুজ্জামান দলের চেয়ারম্যান সহ নীতি নির্ধারকদের জানাতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এভাবে সরে যাওয়াটা ভালো কাজ হয়নি। বিএনপির উচিত এগুলো পর্যালোচনা করা। বসন্তের কোকিলদের এভাবে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী। বিপরীতে এনসিপি সহ কয়েকদিন দল নির্বাচনের মাঠ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বলছেন শঙ্কা ঘনীভূত হলে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে। কিন্তু বিএনপি চাচ্ছে। যথাসময়ে নির্বাচন। এখন এ সময়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে সরে আসাটা মাসুদুজ্জামানের কারণে বিএনপি বিপাকে পড়তে পারেন।
গত সেপ্টম্বরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের মালিক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে আগে থেকেই তিনি বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচত ছিলেন। যোগ দেয়ার অল্পদিনের মধ্যেই পান বিএনপির মনোনয়ন। তবে ভোটের লড়াইয়ের আগেই দিলেন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা।
১৬ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে মাসুদ বলেন, গত ৫-৬ মাসে আমি অনেক জায়গাতে গিয়েছি। সেখানে সকলের সাড়া পেয়েছি। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ ও কিছু পারিপার্শ্বিক কারণে আমাকে এ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। প্রথমত নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা আছে। তার পর পরিবারও চায় না, তিনি ভোটের মাঠে থাকুক। আমি সকল নেতাকর্মীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি জানি কী রকমের কষ্ট আপনারা পাচ্ছেন। আপনাদের স্বপ্নের, আশার জায়গা ছিল। সে আশা ব্যাহত হচ্ছে। এটা আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ ছিল না।
‘আগামীতে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে যিনিই নির্বাচন করবে তাঁর পক্ষেই আমি থাকবো। আমার সকল নেতাকর্মীও ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করবো।’ বলেন মাসুদ।
সংবাদ সম্মেলনের সময়ে অনুসারী নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও তখন বুঝতে পারেনি মাসুদ এ ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। ঘোষণার পর কয়েকজনকে কাঁদতে দেখা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত কারণে আমি নির্বাচন করব না, আমি মনোনয়ন কিনব না। এ কারণে শহর ও বন্দরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকব।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে পরিবার এবং নিরাপত্তা। আমি আগেই বলেছি, পরিবার থেকে বিদায় নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। সেখানে তাদের কোনো বাধা ছিল না। তারা রাজি না হয়েও রাজি হয়েছে। আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছি মানুষের জন্য কাজ করার। সাম্প্রতিক ঘটনা ও পরিবেশ-পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত ও ভীত। এর বাইরেও আরও কিছু নিরাপত্তা ইস্যু আছে, সেটা আমি বিশদভাবে বলতে চাই না। পরিবেশটাই নেগেটিভ। এটি দলের নয়, আমার নিজের সিদ্ধান্ত।’

































আপনার মতামত লিখুন :