নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে হঠাৎ করেই মনোনয়নের প্রাথমিক তালিকাতে স্থান পাওয়া শিল্পপতি মাসুদ নাটকীয়ভাবেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিল্পপতি ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদের দাবী নিরাপত্তা ইস্যু ও পারিবারিক পারিপার্শ্বিক চাপে তিনি বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনুসারীদের কেউ কেউ বলছেন ব্যাংকে ঋণ খেলাপী ও বিদ্রোহীদের বাগে আনতে না পারাটাও নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার একটি কারণ।
তবে এত কারণের ভিড়ে উঠে এসেছে আরেকটি তথ্য। মাসুদ নিজেই ক’ মাস আগে আশঙ্কা করেছিলেন একটি মহল তাকে ফাঁসাতে একটি কল্পকাহিনী নিয়ে মামলার পায়তারা করছেন। প্রশ্ন উঠেছে সেই আশঙ্কার ফাঁদেই কি পড়লেন মাসুদ। কারণ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন ঋণ খেলাপী কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকির কোন ইস্যু নেই। আর শেষতক ধানের শীষের পক্ষেই সকলকে নামতে হতো। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারও জানিয়েছেন নিরাপত্তাহীনতার মত কোন কারণ নেই।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বুধবার চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ অফিসে এসেছিলেন। তখন প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বলেন, কোনো প্রার্থী কেন নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে যিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, তিনি আসলে কী ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, সেটি তিনি নিজেই ভালো বলতে পারবেন। তবে সামগ্রিকভাবে দেশে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ছিলেন মাসুদুজ্জামান। তখন থেকে তিনি এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাশঙ্কার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মাসুদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত কারণে আমি নির্বাচন করব না, আমি মনোনয়ন কিনব না। এ কারণে শহর ও বন্দরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকব।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে পরিবার এবং নিরাপত্তা। আমি আগেই বলেছি, পরিবার থেকে বিদায় নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। সেখানে তাদের কোনো বাধা ছিল না। তারা রাজি না হয়েও রাজি হয়েছে। আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছি মানুষের জন্য কাজ করার। সাম্প্রতিক ঘটনা ও পরিবেশ-পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত ও ভীত। এর বাইরেও আরও কিছু নিরাপত্তা ইস্যু আছে, সেটা আমি বিশদভাবে বলতে চাই না। পরিবেশটাই নেগেটিভ। এটি দলের নয়, আমার নিজের সিদ্ধান্ত।’
মাসুদুজ্জামান মাসুদের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একজন ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি হিসেবে তার অনেক ব্যাংক ঋণ থাকে। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তা হালনাগাদ না হলে তার প্রার্থিতা ঠিকবে না। মাসুদুজ্জামানের এমন কোনো সমস্যা থাকতে পারে।
এছাড়া তাকে দল প্রাথমিক মনোয়ন দিলেও এই আসনের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত তিনজন নেতা তার মনোনয়ন মেনে নিতে পারেননি। তারা হলেন এ আসনে বিএনপি থেকে তিনবারের সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তাদের জোটবদ্ধ বিরোধিতার কারণে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা। মাসুদ ভেবেছিলেন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে একটি সমঝোতা হবে, কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় তিনি হয়তো ভোটের মাঠে নিরাপদ মনে করছেন না।
তবে এতকিছুর মধ্যে মাসুদুজ্জামান অক্টোবরেই এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তিনি খবর পেয়েছেন একটি মহল ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি কল্পকাহিনী বানিয়ে মামলা বা অপপ্রচারের ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনের আগে সেটা করিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।
এ আশঙ্কা এতটাই প্রকট ছিল না সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইবুনাল আদালতের বাইরে নিয়মিত জুনিয়র আইনজীবীদের প্রহরা বসানো হয়েছিল। কেউ এ সংক্রান্ত মামলার আবেদন করে কি না সেটা নিশ্চিত করতেই সেই প্রহরা বসানো হয়। ওই সময়ে এক নারী এ মামলা করার আবেদনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এর মধ্যে আদালতের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়ে যায়। তবে মাসুদ অনুসারীদের আশঙ্কা ছিল সেই মামলাটি হয়তো করা হতে পারে।
এদিকে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাশঙ্কা নিয়ে আমাদের কাছে বা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও কোনো তথ্য নেই। মাসুদুজ্জামান আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ জানাননি। তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
১৭ ডিসেম্বর সংবাদ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির মত কোন ঘটনা নাই। আমেরিকার মত দেশেও নির্বাচন আসলে এমন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটে। তার এসব ঝুঁকি নিয়েই তো রাজনীতি করতে হয়। ঋণ খেলাপীর যদি শঙ্কা থাকতো তাহলে মাসুদ হয়তো আগে হতে মাঠ গোছাতো না।

































আপনার মতামত লিখুন :