রাজনৈতিক মারপ্যাচে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত চাঞ্চল্যকর বোমা হামলা মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ টানা ১৬ বছর এ মামলা নিয়ে টালবাহনা করেছেন। মামলাকে পুঁজি করে ওই ঘটনায় আহত শামীম ওসমান, চন্দন শীল সহ অনেকেই ফায়দা লুটলেও নিহত পরিবারগুলো ছিল কার্যত অসহায় উপেক্ষিত। প্রতি বছর ১৬ জুন আসলে তাদের স্মরণ করা হলেও স্থায়ী আমানত কিংবা পরিবারের জন্য কিছুই করেনি আওয়ামী লীগের লোকজন। সবশেষ এমপি শামীম ওসমান সাক্ষ্য দিতে গিয়ে চার্জশিটের বিষয় প্রশ্ন তংলেছিলেন। তবে আদালত আসছে আগস্টের শুরুতে রায় ঘোষণা দিবেন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। আর এই রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, মামলায় ১৯ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ডাক্তারের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সেই সাথে সাক্ষী গ্রহণ সমাপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হয়নি। তারা মামলার নিস্পত্তির উদ্যোগ নেননি। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই মামলার বিচার কার্যক্রম ঝুলেছিলো। বর্তমান সরকারের সময়ে আদালত মামলাটি নিস্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সাথে সমস্ত কার্যক্রম শেষে আদালত আগামী আগস্টের শুরুতেই রায়ের দিন ধার্য করেছেন যার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
২০০১ সালে ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। সেদিন নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা। নিহত মহিলার পরিচয় পেতে তেমন কোন চেষ্টা করেনি প্রশাসন। হামলায় শামীম ওসমান সহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। তার ব্যক্তিগত সচিব চন্দন শীল, যুবলীগ কর্মী রতন দাস দুই পা হারিয়ে চিরতরে বরণ করেছে পঙ্গুত্ব।
বোমা হামলার ঘটনায় খোকন সাহা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলায় (একটি বিস্ফোরক অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের মোট ২৭ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বোমা ট্রাজেডি মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে মিলে অবাক করা তথ্য।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানি হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা করেন। উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেন।
দীর্ঘ ছয় বছর মামলাটি হিমাগারে থাকার পর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে আদেশ দেন। ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলার ১২ বছর ছয়জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি দিয়ে দুটি মামলাতেই নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯৪৭ পাতার পৃথক দুটি চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। তবে উভয় মামলাতেই অভিযুক্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্তরা ছিল অভিন্ন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত ছয়জন হলেন নারায়ণগঞ্জে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান (এরই মধ্যে অপর এক মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে রায় কার্যকর), জঙ্গি নেতা ওবায়দুল্লাহ রহমান (ইতেহামধ্যে তিনি মারা গেছেন), ভারতের দিল্লী কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।
আপনার মতামত লিখুন :