চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় জড়িতদের একজন ওবায়দুল ছিলেন মাস্টারমাইন্ড। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রধান ভিকটিম শামীম ওসমানের মতে ওবায়দুল্লাহ ওবায়দুল হক নামের এক ব্যক্তি মোরসালিন ও মোত্তাকিমকে নিয়ে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার কিছুক্ষণ আগে প্রবেশ করেন। ওবায়দুল হক নিজেই শামীম ওসমানের সামনে গিয়ে টেবিল চাপড়ায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে ওবায়দুল জামিন ও পরে পলাতক থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারে ছিল না তেমন কোন উদ্যোগ। এরই মধ্যে তিনি মারা গেছেন।
ওবায়দুল হকের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ও মিশনপাড়ার সংযোগস্থল চকলেট ফ্যাক্টরী মোড়ে। সেখানে তাঁর একটি বহুতল ভবন রয়েছে। তার ছেলে জাবেদুল হক রিপনও সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন। তবে মৃত্যুর আগে ওবায়দুল হকের টিকিটি পর্যন্ত ছুতে পারেনি কেউ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোমা হামলার মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে শামীম ওসমানের বক্তব্য ও চার্জশীটে ওবায়দুল হকের কথা বেশ গুরুত্ব দিয়েই তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। খোদ শামীম ওসমানও বলেছেন, আমি সিআইডির সেই তদন্ত কর্মকর্তাকে (পূর্ববর্তী) বলেছিলাম যার নির্দেশে এই বোমা হামলার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে তিনি কিন্তু সরে পরবেন। জবাবে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন আমরা তাকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রেখেছি। পরে যখন মামলার চার্জশিট প্রদান করেছে, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি (হুকুমদাতা) কোথায়? তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা জানালেন উনি পলাতক, তখনি বুঝলাম কোথাও না কোথাও গলদ আছে।
চার্জশীটে যা আছে
২০১৩ সালের ২ মে আদালতে দেওয়া চার্জশীটে এ দুইজন সহ ৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশীট জমার দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ শাখার এএসপি এহসানউদ্দীন বলেছিলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন তাকে বলেছেন যে ২০০১ সালের ১৬ জুন বিকেলে চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে এসেছিলেন ওবায়দুল নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি শহরের চাষাঢ়ায় চকলেট ফ্যাক্টরী মোড় এলাকাতে। তিনি সহ আরও ২ জন মোট ৩জন এসেছিলেন আওয়ামী লীগ অফিসে। রাত ৭টার দিকে তিনি সহ ২ জন শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত কক্ষে গিয়ে কথা বলেন। তারা এসেছিলেন আমেরিকার ভিসার জন্য সুপারিশ করতে। ৩জন এলেও মূলে ছিলেন ওবায়দুল। তিনিই মূলত আমেরিকা যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন। শামীম ওসমানের সঙ্গে তিনি কথা বলে ওই কাগজপত্রে সুপারিশ চান। কিন্তু শামীম ওসমান তা দিতে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেন। ওই সময়ে ওবায়দুল হঠাৎ করেই শামীম ওসমানের সামনের টেবিল চাপড়ে উঠে বলেন, ‘আমার জন্য কেন সুপারিশ করবে না, দিবে না কেন, আমরা তোমার মহল্লার লোক। আমাদের জন্য না করলে কার জন্য করবে?’
শামীম ওসমান তাঁকে বলেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সাংসদদের সুপারিশে ভিসা দেয় না। তার পরও ওবায়দুল হক সুপারিশের জন্য পিড়াপিড়ি করতে থাকেন।
ওবায়দুলের সঙ্গে আসা ২ জনের একজনের হাতে ছিল কালো ব্রিফকেস। দুই যুবক ফটোকপি করা একটি আবদেনপত্রে শামীম ওসমানের সুপারিশসহ সই চান। এর মধ্যে ওবায়দুল হক দ্রুত বেরিয়ে যান। সে সময়ে শামীম ওসমানের প্রভাব ছিল দোর্দান্ড। কিন্তু ওই মুহূর্তে শামীম ওসমানের টেবিল চাপড়ে ওবায়দুল এর মত একজন ব্যক্তির সে আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উঠেন রুমে থাকা অন্যরা। তারা অনেকটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ওবায়দুল এর দিকে।
ওবায়দুল অনেকটা উত্তেজিত থাকলেও অন্য ২ জন ছিলেন বেশ নীরব। তারা বসে শুধু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :