নারায়ণগঞ্জের স্মরণকালের ইতিহাসের ভয়াবহ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা মামলায় বিএনপির ২৭ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হলেও চার্জশীটভুক্ত হয়েছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর ও বিলুপ্ত পৌরসভার কমিশনার শওকত হাশেম শকু।
মামলায় যে ৬জনকে চার্জশীটভুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী ভারতের রাজধানীর দিল্লীর একটি রেল ষ্টেশন হতে হরকাতুল জিহাদের দুই জঙ্গি সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বোমা হামলার ঘটনা স্বীকার করেছেন। বর্তমানে দিল্লী কারাগারে বন্দী রয়েছে। এছাড়া ওবায়দুল হক ইতোমধ্যে মারা গেছেন। মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আরো একটি মামলায়। ফলে ৬ জনের মধ্যে চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বাকি দুইজনের মধ্যে জুয়েল ও শকু।
বোমা হামলার পর দিন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুইটি মামলায় (একটি বিস্ফোরক অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের মোট ২৭ জনকে আসামী করা হয়। মামলার আসামীরা হলেন জেলা বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম সরদার, সুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ শ্যামল, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মনিরুল ইসলাম রবি, ক্যাপ্টেন দুলাল, তুষার আহমেদ মিঠু, কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহ সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, সামসুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ। মামলার আসামী কামালউদ্দিন মৃধা, মমিনউল্লাহ ডেভিড ও তার ভাই ওবায়েদউল্লাহ মনা, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, সুরুজ্জামান মারা গেছেন।
মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া ও গোলাম আজমের সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে আসামীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে আসে। মামলাটি পরবর্তীতে সিআইডিতে বদলী করা হলে এর তদন্তভার গ্রহণ করেন সিআইডির এএসপি আমিনুর রহমান। ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বোমা ট্রাজেডি মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, ‘উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জিবীত করার ব্যবস্থা করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর মামলাটি হিমাগারে থাকার পর সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে আদেশ দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানী হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগি সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামী করে একটি মামলা করেন। পরবর্তিতে উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেয়।
নাটকীয়তা আর রাজনৈতিক মারপ্যাচের ১৩ বছর পর ২০১৩ সালে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় সিআইডি।
আপনার মতামত লিখুন :