গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধাভোগী হয়ে আসছেন। চারদিকেই তাদের রাজত্ব। কিন্তু তারপরও যেন নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যাণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। বিভিন্ন রকরের সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা রকমের সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ। এখানকার জনপ্রতিনিধিদের ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও জনসাধারণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ এলাকা হলেও এই নারায়ণগঞ্জে নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই ভালো কোনো হাসপাতাল। সেই সাথে যানজট একেবারে নিত্যদিনের সঙ্গী। এখানকার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন উন্নয়নের বুলি আওরিয়ে বারবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও নির্বাচন শেষে তারা যেন বেখেয়াল হয়ে যান।
বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় যেন কোনো উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসীর দুর্ভোগও কমেনি। বরং দিন দিন তাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। কিন্তু সেই দুর্ভোগ লাঘবে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিলো না।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। দীর্ঘদিন পর খালি মাঠে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের সবকিছুতেই একছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সবকিছুতেই তারা একচেটিয়াভাবে সুবিধাভোগী হয়ে আসছেন। কিন্তু জনসাধারণের কল্যাণে তারা সবসময় নিরব ভূমিকা পালন করে আসছেন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় এলাকার ডিএনডিবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই ডিএনডিবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দিনের পর দিন তাদের পানির নিচে জীবনযাপন করতে হয়। আকাশে মেঘ জমলেই ডিএনডিবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে ডিএনডিবাসীকে দীর্ঘদিন পানির নিচে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকাবাসীকে কোমর পর্যন্ত পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আর এই সীমাহীন দুর্ভোগের সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী নেতাকর্মীরা সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল নিয়েই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম একটি খাল ছিল কালিয়ানী খাল। যে খালটি ফতুল্লা এলাকা তথা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন সংসদীয় এলাকা। এই খালটি দিয়ে একসময় স্বচ্ছ পানি প্রবাহমান থাকতো। সেই সাথে খালটির আশে পাশের মানুষ এই খাল থেকে অনেক মাছ শিকার করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই খালটি পুরোপুরিভাবে অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। শিল্প কারখানার ক্যামিকেলের রং খালটির পানি নষ্ট করে ফেলছে। খালটির প্রবাহ নষ্ট করে ফেলছে।
খালটির প্রবাহ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গলাচিপা, মাসদাইর ও আশপাশ এলাকা সহ ফতুল্লা এলাকাবাসীকে অনেকদিন ধরেই দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসতে হচ্ছে। অনেকবার এই খাল খননের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সফল হতে পারেননি। ফলে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ফতুল্লা এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।
অন্যান্য বছর অন্তত বর্ষা মৌসুমে কোনো রকম উদ্যোগ নেয়া হলেও এবছর কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা নিরসন করাটা বেশ মুশকিল হয়ে যাবে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এগিয়ে না আসলে হয়তো এলাকাবাসীকে হয়তো বাড়িঘর ছাড়তে হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :