নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেছেন, সুসময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্পর্কে বলতে গেলে একাল আর সেকালের কথা বলতে হবে। যেমন সেকালে আমাকে পুলিশ খোঁজতো, কোর্টের বারান্দায় দৌড়াতাম। এখন তা আমার করা লাগে না। দলের চরম ক্লান্তিকালে আমাকে আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব নারায়ণগঞ্জ জেলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব পাওয়া পর থেকে আমি বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলাম। ২০২২ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর আমরা জেলা-মহানগর বিএনপির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করেছিলাম। আমার সঙ্গে শাখাওয়াত, সেন্টু, টিপু, মান্নানরা উপস্থিত হয়ে যখন আমরা মিছিল করছিলাম তখন আমাদের বাধা প্রদান এবং লাঠিচার্জ করা হয়। সেদিন দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত শামীম ওসমানের পেটুয়া বাহিনী এবং হাসিনার পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। একপর্যায়ে আমাদের উৎখাত করতে না পেরে গুলিবর্ষণ করা হয়। তখন আমাদের যুবদল কর্মী শাওন শহীদ হয়েছেন। আমি জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করবো রেলগেটের ওই চত্বরকে শাওন চত্বর হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাওনের পরিবারের পাশে বিএনপি আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওনের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের শওকত চেয়ারম্যান শাওনকে তার ভাতিজা পরিচয় দিয়ে যুবলীগ কর্মী বানানোর চেষ্টা করেছিল। তখন আমি বিরোধিতা করেছিলাম। হাসান মাহমুদ নারায়ণগঞ্জক্লাব থেকেও শাওনকে যুবলীগ কর্মী বলেছিল তখনও আমি বিরোধিতা করেছি। একটা পর্যায়ে প্রমাণিত হয়েছিল শাওন মূলত যুবদল কর্মী। শাওন হত্যার পরের দিন আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাসায় এসেছিল। তখন জনাব তারেক রহমান একটা আর্থিক সহায়তা মহাসচিবের মাধ্যমে শাওনের মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। নিহত শাওনের মায়ের জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যাংকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছেন। সেই টাকা হতে যে অর্থ আসে প্রতিমাসে সেটা তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যাতে তার পরিবার খুব ভালোভাবে চলছে। ওইসময় আমাদের কর্মী শাওন হত্যা মামলার আসামিও আমাকে করা হয়েছিল। শুধু আমাকে না, ঘটনাস্থল থেকে যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার পর থেকে আমাদের মোট ১০১ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল।
রবি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজির খবর আমরা জানতে পারছি আমি বলতে পারবো শেখ হাসিনার আমলে আমাদের দুর্দিনে এদের একজনকেও আন্দোলন সংগ্রামে পাইনি। তারাই এখন বিএনপির বদনাম করার জন্যে দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। আমাদের দলের মধ্যে কেউ কেউ আছেন মন্ত্রী হবেন, মেয়র হবেন ও এমপি হবেন আবার কেউ চেয়ারম্যান হবেন। এরাই দলকে ব্যবহার করছেন তাদের বাহিনীর দরকার বলে। আর তারা যখন নিজেদের বাহিনী তৈরি করে তখন দলের নিপীড়িত ও নির্যাতিত কর্মীরা রাজনৈতিক দ্বিমুখ হয়ে যায়। যারা রাজনীতি করে তারা নির্বাচন করবে, চেয়ারের আশা করবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। এজন্যই আমি আমাদের নেতা তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ করবো সংস্কারের সময়ে দলকে আলাদা করেন আর যারা এমপি, মন্ত্রী, মেয়র হবেন তাদেরকেও আলাদা করেন। বিগত দিনে শেখ হাসিনা যখনই শামীম ওসমান আর সেলিম ওসমানদের হাতে দল তুলে দিয়েছিল বলে এই ভরাডুবি হয়েছে। সে পালিয়ে যাওয়ার পর তার জন্য পাঁচজন মানুষও নেমে মিছিল করেনি। তাই আমার দল এই পরিণতি ভোগ করুক আমি তা চাইনা।
জাকির বলয়ে বিষয়ে রবি বলেন, আমি বিএনপির একজন কর্মী। আমি যখন দল শুরু করি তখন জাকির খানের জন্মও হয়নি। আমি নির্যাতিত-নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকা আমার নেতা জিয়াউর রহমান আমাকে শিখিয়ে গেছেন। ২২ বছর জাকির খান দেশে থাকতে পারেনি। সে পালিয়ে থাকাকালীন সময়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই ছেলেটা বিএনপি করতো। একসময় সে জেলা ছাত্রদলের দায়িত্বে থাকায় তার কারাবন্দীকালে তার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামা আমার দায়িত্ব ছিল। আমার বিবেকের তাড়নায় আমি তার পাশে দাঁড়িয়েছি। এদেশের সবাই কিন্তু তুলসীপাতা নয়। তাই ভুলত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে নিতে কাউকে সাহায্য করতে পারলে সেটা সোওয়াবের কাজ। জাকির খান কারামুক্তি পর এসে কোনো গার্মেন্টস দখল করেছে? কিংবা কোনো কিছু দখল করেছেন। জাকির খান কোথাও কোনো সন্ত্রাস করেছে? সে গুম খুন হত্যার সাথে জড়িত আছে এমন কোনো রিপোর্ট আছে বলে মনে হয়না। আমি ভাই হবার রাজনীতি করি না আমার ভাইয়ের নাম তারেক রহমান। জাকির খান বিএনপি করে একজন বিএনপির কর্মী হিসেবে সকল কর্মস‚চিতে অংশগ্রহণ করার অধিকার তার আছে। তবে সে যখন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হবেন তখন আমাকে তার সঙ্গে পাওয়া যাবে না।
শামীম ওসমানের সমালোচনা করে আলোচনায় আসার বিষয়ে রবি বলেছেন, বিগত সময়ে আমি শামীম ওসমানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিলে নিউজ নারায়ণগঞ্জের মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছিল। আমাদের এখানে বেশকিছু চোরা রাজনীতিবিদ আছে, কিছু শিল্পপতি আছে, সমাজপতি আছে যারা বর্তমানে ওসমান পরিবারের সাম্রাজ্যের দেখাশোনা করছে। যেসব শিল্প সেক্টরে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ওইসব সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দেন সেসমস্ত নেতারা এসব দেখাশোনা করে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা নেতাকর্মী ওসমান পরিবারে সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্পর্কে রেখেছে। তাদের সঙ্গে একসাথে ঘুমিয়েছে, থাকছে। আমি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকে বলবো যারা এখনো ওসমান পরিবারের ব্যবসা বাণিজ্য রক্ষা করছে তাদের অনতিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।
২৯ মে রাতে নিউজ নারায়ণগঞ্জের একটি ভার্চুয়াল টক শোতে তিনি এসব কথা বলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন মো. আকাশ।
আপনার মতামত লিখুন :