নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে কোন কর্মসূচি পালন করছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম ছাড়া জেলা পর্যায়ে ছিলো না কোন কর্মসূচি। অনেকটা উদ্দেশ্যহীন ভাবেই চলছিলো দলের কার্যক্রম। দীর্ঘ বিরতির পর কর্মসূচিতে সরব হয়েছেন জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্র করে। পাড়া মহল্লায় খাবার বিতরণ ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচীতে জেগে উঠেছে বিএনপি। কর্মসূচিতে যখন উজ্জীবিত বিএনপি, ঠিক তখনই নেতারা মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা এড়িয়ে নিজেদের অভ্যন্তরিন ক্ষোভ ঝাড়া শুরু করেছেন।
সম্প্রতি বিএনপির রাজনীতিতে ধীরে ধীরে সক্রিয় ও প্রভাব রাখতে শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। এতদিন রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়ে হঠাৎ বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে শুরু করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম ও একই আসনে এমপি পদপ্রার্থী মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। আবুল কালাম এবং সাখাওয়াত পৃথক বলয় নিয়ে রাজনীতি করলেও মাসুদের বিরুদ্ধে অবস্থান তাদের এক করেছে।
গত ৩১ মে নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন আবুল কালাম। তার বক্তব্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হয়ে ওঠা মাসুদুজ্জামানকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আজকে যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা আজকে রাজনীতিতে আসতে চায়। রাজনীতি আসার কোন আপত্তি নাই কিন্তু গণতন্ত্র অনুযায়ী পদ পরিক্রমা করে আসতে হবে। রাজনীতিতে তাদের অবদান রেখে আসতে হবে। বিগত ১৬ বছরে রাজনীতিতে দেখা যায়নি আজকে তারা মাঠে এসে এমপি হয়ে যেতে চায়। তাদের কাছ থেকে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। যেদিন যার কাছে ধানের শীষ আসবে সেদিন সকলে আমরা তার সাথে এক সাথে থাকবো।
১ জুন একই কর্মসূচিতে সাখাওয়াত হোসেন খান মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকে একটা বিষয় খেয়াল করেছি, ১৫ বছর যাদের মাঠে দেখি নাই, যারা দল করে নাই, যারা বিএনপি থেকে যোজন দূরে ছিল তারা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছেন। বিএনপির নাম শুনলে যারা সামনে আসে নাই তারা আজ বিএনপির কথা বলতে চায়। বিএনপি থেকে নমিনেশন চায়। অনুষ্ঠান করেন কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৫ আগস্ট ২০২৪এ। আজকে যারা বিএনপিতে এসে বিএনপিকে বিভক্ত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে ভালো না। আপনারা সুসময়ে মধু খেতে এসেছেন। মধু আপনাদের ভাগ্যে হবে না ইনশাল্লাহ।
কালাম এবং সাখাওয়াত দুই প্রভাবশালী নেতা মাসুদুজ্জামানের বিরোধীতা করলেও অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসন এলাকায় বিএনপির বড় একটি অংশ মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছেন নীরবে। যার মধ্যে রয়েছেন নাসিকের সাবেক বেশ কয়েকজন বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময় জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে তারা বেছে নিয়েছেন বিকল্প প্রার্থীকে। যা নিয়ে চলছে মহানগর বিএনপিতে অস্থিরতা।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নেতাদের রাজনৈতিক বা মনোনয়নের জন্য লড়াই খুবই স্বাভাবিক। নির্বাচনী প্রতিযোগীতার লড়াইয়ের জন্য পৃথক সভা ডেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারতেন সুস্পষ্ট ভাষায়। তবে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে দলের প্রতি তার ত্যাগ, অবদান ইত্যাদি আলোচনা এড়িয়ে অভ্যন্তরীন ইস্যু সামনে নিয়ে আসা ছিলো দৃষ্টিকটু। যা আগামীদিনে নেতারা এড়িয়ে চলবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
আপনার মতামত লিখুন :