মামলা, গ্রেপ্তারে ঘরছাড়া রয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের গ্রেপ্তারে আওয়ামী লীগের শিবিরে আতঙ্ক বেড়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই পালিয়ে বেড়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে নেতৃত্বশূণ্যতা দেখা গেছে। বর্তমানে কেউই আওয়ামী লীগের হাল ধরতে চাচ্ছেন না। অধিকাংশ নেতারা ভালো থাকলেও বিপদে রয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। এ নিয়ে নেতাদের প্রতি কর্মীদের চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান বারবার খেলার কথা বললেও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে তিনিও তার অনুসারীদের নিয়ে দেশের বাহিরে পালিয়ে যান। তবে এখান দিয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন আইভী। তার বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হলেও তিনি ৫ই আগস্টের পর থেকেই শহরের দেওভোগ এলাকার নিজ বাসভবন চুনকা কুটিরে ছিলেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। পাশাপাশি অনুসারীদেরও নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতেন। দুদকের মামলা দায়েরের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তিনি নিজের বাড়ি ত্যাগ করেন নি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে গেলেও এলাকাবাসী ও তার অনুসারীদের বাধার মধ্যে পড়তে হয় পুলিশকে। এদিকে, আইভীর দিকে মূলত নেতাকর্মীরা তাকিয়ে ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, আইভীর হাত ধরে হয়তো নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ফিরবে। কিন্তু আইভীর গ্রেপ্তারে সে স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের হাল ধরার মতোন কোনো নেতা না থাকায় এই জেলা থেকে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব সংকট দেখা গেছে।
এর আগে সরকার থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জের একাধিক স্থানে মিছিলের মাধ্যমে ফের নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে গত ২১ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিন সকাল ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় এই ঝটিকা মিছিল করেন তারা। এসময় ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। আর গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে আড়াইহাজারের উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নে হাবিবুর রহমান মোল্লার সমর্থকরা এই মিছিল করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একই ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান মোল্লার সমর্থক হান্নান মিয়া ও রুবেল হোসেন। কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৫৩ বছর উপলক্ষে এই মিছিল করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার আড়াইহাজারের সমর্থকরা। ঝটিকা মিছিলের একটি ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ৮মাস পার হয়ে গেলেও এখনো দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা পারছে না নেতাকর্মীরা। এর ফলে এখনো পরিবার ছাড়া এক অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ তারা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তা নিজেরাও জানেন না। তারা প্রত্যেকেই নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে অধিকাংশ নেতাকর্মী এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ কলকাতায়, কেউ আবার লন্ডন কিংবা দুবাইতে পালিয়ে রয়েছেন। আর দেশে যারা আত্মগোপনে রয়েছেন তারা মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে রাজনীতিতে কামব্যাক করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বর্তমানে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা কাজ করছে। একই সঙ্গে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন। তাদের ভাষ্য, এখনো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে। গ্রেপ্তার চলমান রয়েছে। তাদের অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। কেউ প্রকাশ্যে আসতে চাইলেও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর ফলে বাধ্য হয়েই তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। কবে নাগাদ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এ নিয়ে শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছেই। তাদের করুণ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে তারা সিনিয়র নেতাদেরই দুষছেন। বিশেষ করে যারা বিদেশে পালিয়ে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন। এসব কারণেই অনেকেই নেতাদের উপর ক্ষুদ্ধ রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :