বিভিন্ন জটিলতায় ঈদুল আযহাকে ঘিরে বেতন বোনাস না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ১৩ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের। আগামী ৩ জুনের মধ্যে সকল বকেয়া বেতন ও বোনাস দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। অধিকাংশ কারখানাগুলোতে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও এই ১৩টি কারখানা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সকল সংশয় দূর করতে গত ২৬ মে দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ১৩টি কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক। শ্রমিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে ৩ তারিখের মধ্যে সকল বকেয়া পরিশোধ করার নির্দেশ দেন তিনি। এসময় কারখানাগুলো মালিক কর্তৃপক্ষ আশ্বস্থ করেন যথাসময়ে তা পরিশোধ করে দেওয়ার।
জেলা শিল্পাঞ্চল পুলিশ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বতর্মানে নারায়ণগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট ৪৪২টি পোশাক কারখানা সচল রয়েছে। যেসব কারখানায় শ্রম অসন্তোষ হতে পারে তা হলো সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায় আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন এএসটি গার্মেন্টস, বন্দর উপজেলার আজিজ আল কাইসার টিটুর মালিকানাধীন পারটেক্স স্টার গ্রুপ, বন্দরের কামতাল বারপাড়া এলাকার মেহরাব হাসিবের মালিকানাধীন টোটাল ফ্যাশন লিমিটেড, সদর থানাধীন আক্কাস উদ্দিন মোল্লার রাসেল গার্মেন্টস, রুপগঞ্জের ভুলতার সাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদের রবিনটেক্স লিমিটেড, ফতুল্লার বিসিক এলাকার এনামুল হকের ইয়াং থ্রি ফ্যাশন লিমিটেড, ফতুল্লার কুতুবাইল এলাকার রবিউল ইসলামের ইউনিটি কম্পোজিট মিলস প্রাইভেট লিমিটেড, ফতুল্লার শাসনগাঁ এলাকার আসলাম সানির ক্রোনী অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফতুল্লার মালঞ্চনগর এলাকার হারুনুর রশিদের এশিয়ান টেক্সটাইল, বিসিকের মো. মোহনের স্টারলেট কম্পোজিট লিমিটেড, আব্দুর রহিমের ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড এবং সানারপাড় এলাকার এসএম কবির মহিউদ্দিনের লিথি অ্যাপারেলস।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস সংকট, ব্যাংকে অর্থ জটিলতা, উৎপাদন অপ্রতুলতা, অভ্যন্তরীন সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি কারণে তাদের এমন বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। এছাড়া পোশাক শ্রমিকরা প্রায়সময় বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে কারখানায় কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। তবে তারা এই সমস্যা কাটিয়ে তারা কামব্যাক করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি (অর্থ) মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, আমাদের শত সমস্যার মধ্যেও শ্রমিকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। এ নিয়ে কোনো ছয় নয় করা যাবে না। যদি কোনো মালিক কর্র্তৃপক্ষ সরকারের নিয়ম না মানে তাহলে আমাদের বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হবে না। সরকার যে ব্যবস্থা নিবে আমরা তাতেই সমর্থন দিবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সবসময় ঈদের আগে শ্রমিক অসন্তোষ ঘিরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের নারায়ণগঞ্জের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। আসন্ন ঈদের আগে যেনো এমন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা ১৩ পোশাক কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যতো সমস্যা থাকুক সরকারের নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শ্রমিকের সব বেতন বোনাস দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি আমি শ্রমিক ভাই বোনদেরও ধৈর্য্যধারণ করার অনুরোধ করছি। মালিক, শ্রমিক ও শ্রমিকনেতারা যদি মিলেমিশে থাকে, একজন আরেকজনকে ছাড় দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করে তাহলে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটবে না। আশা করছি, আগামীতে এসব সমস্যা আর থাকবে না।
আপনার মতামত লিখুন :