News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আইভীর গ্রেপ্তার ছিল আলোচনায়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম আইভীর গ্রেপ্তার ছিল আলোচনায়

নানা ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বছরের আরেকটি মাস। মে মাসে নারায়ণগঞ্জে ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর গ্রেপ্তার জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। গত ৯ মে ভোরে শহরের দেওভোগ এলাকায় চুনকা কুটির থেকে তাকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি ৩টি মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৬টি মামলা রয়েছে।

এর আগে গত ৮ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানা মডেল পুলিশের একটি দল আইভীর বাড়ি চুনকা কুটিরে প্রবেশ করেন। তবে তখন তাকে গ্রেপ্তার করা যায় নি। কেননা তার গ্রেপ্তারের খবর চারদিকে  ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা ও তার সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা রাস্তায় নেমে আসলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আইভীর বাড়ির দিকে যাওয়ার চারটি রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন আইভীর সমর্থকেরা। আশেপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সকলকে আইভীর বাড়ির দিকে রওনা দেয়ার আহবান জানানো হয়। এর ফলে পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় রাতেই বাড়তি পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করার পরও আইভীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে মধ্যরাতে তিন পুলিশ কর্মকর্তা আইভীর বাড়িতে প্রবেশ করলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আইভী নিজেই পুলিশের গাড়িতে ওঠেন।

এদিকে দেওভোগ থেকে আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের কালীরবাজার মোড় এলাকায় তাঁকে বহনকারী গাড়ির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে ৩০-৪০ জনের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হোন।

এর আগে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর নিজ বাসভবন ‘চুনকা কুটি’র থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ। গ্রেপ্তার করে ভ্যানে তোলার সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না কেন আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেহেতু আমার এখানে প্রশাসন এসেছে এবং উনারা বলেছে আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। যদিও তারা আমাকে দেখাতে পারে নাই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তাদের সঙ্গে যাচ্ছি। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি যে, তারা রাত্রিবেলা এসেছে। আমি রাত্রিবেলা বের হতে চাই নাই। সারারাত আমার এখানেই ছিলো প্রশাসনের লোকজন। আমার মহল্লার লোকজন সারা রাত এখানে অবস্থা নিয়েছে। আমি আমার মহল্লাবাসীকে ধন্যবাদ দিতে চাই তাদের এই ভালোবাসার কারণে। আপনারা কোন উশৃংখল আচরণ করেন নাই। আমার প্রতি যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আপনারা দেখিয়েছেন আমি আজীবন মনে রাখবো।  একমাস হয়নি আমার অত্যান্ত আদরের ছোটভাই মো. আলী রেজা রিপনকে হারিয়েছি। আজ সেই ভাইয়ের শোক এখনো ভুলতে পারি নাই। এর মাঝখান দিয়ে আমাকে এরেস্ট করা হলো। এখানে আমার বড় ভাই না বোন নাই আমিই সবার বড়। আমি কী কোন জুলুমবাজ, আমি কী হত্যা করেছি? আমি কী চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে এমন কোন রেকর্ড আমার আছে যে কোন বিরোধী দলকে আমি আঘাত করেছি? তাহলে কিসের কারণে, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে, কার স্বার্থে আমাকে এরেস্ট করা হইলো? আমিও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই।’

আইভী আরও বলেন, ‘আমি আলী আহমদ চুনকার সন্তান। আমার বাবা সাম্যের রাজনীতি করেছে। দলমতের উর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করেছে। আমার যদি অপরাধ হয়ে থাকে জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলার কারণে তাইলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই। এজন্য যদি আমার বিচার হয়, বিচার হবে! কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরে ২১ বছর আমি সেবা দিয়েছি। কোনদিন কেউ বলতে পারবে না আমি কখনো প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অন্য কোন দলের প্রতি আঘাত করেছি অথবা কারও প্রতি বৈষম্য আচরণ করেছি। দলমতের উর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিরোধ-মতভেদের সত্তে¡ও এই শহরে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এমন কোন জায়গা নাই যেখানে প্রতিবাদ করি নাই। যখন নারায়ণগঞ্জবাসী একদম চুপ ছিল। কোনো কথা বলে নাই ত্বকী হত্যাসহ সকল হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তখন আইভী আওয়াজ তুলেছে। এই শহরের মানুষকে কথা বলা শিখিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শিখিয়েছে।’

Islam's Group