সাবেক মেয়র আইভীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের গাড়ী বহরে হামলা ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তার সমর্থক ও আস্থাভাজনদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে তরুণ সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান, ফুড ব্লগার শওকত মিথুন, হানিফ মিয়া ও ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদ রয়েছেন। এরপর থেকে তাদের একাধিকবার জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় হতাশ সৃষ্টি হয়েছে আইভী পন্থীদের মধ্যে।
জানা যায়, গত ৯ মে শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর তাকে তাকে বহনকারী পুলিশের গাড়িতে হামলা ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করা হয়। মামলায় সাবেক মেয়র আইভীর মামাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজন ও নেতাকর্মীসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও দেড় থেকে দুইশজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশের গাড়িতে হামলা এবং পুলিশকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটি দায়ের পর পরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত হাসিবুর রহমান জিসান, শওকত মিথুন, হানিফ মিয়া নামে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নেওয়া হয়। এর পরদিন দেওভোগ থেকে মামলার আসামী না হয়েও ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও হামলার অভিযোগে পুলিশের এক মামলায় ১২মে গভীর রাতে নগরীর শহীদনগর এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান। একই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জিসানের বাবা মো. হানিফ এবং চাচা ফুড বøগার শওকত মিথুনও কারাগারে। জিসান ও তার পরিবারের দুই সদস্যের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওলাদ হোসেন, শাহীন মাহমুদ, জিয়াউল ইসলাম কাজল ও আবু রায়হান। জুলাই অভ্যুত্থানের সক্রিয় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জিসানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন।
গত সপ্তাহে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার জুলাই অভ্যুত্থানের সক্রিয় কর্মী ও নারায়ণগঞ্জের তরুণ সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের জামিন আবেদন তৃতীয় দফায় নামঞ্জুর করেছে আদালত। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুম এ আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের এএসআই মোস্তাফিজুর রহমান। এর আগে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে দুই দফায় তার জামিন আবেদন নাকচ হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। ২৯ মে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে রিমান্ড শেষে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান বলেন, হত্যা ও বিস্ফোরক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের নির্দেশে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ মে আইভীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ২৭ মে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হাসান।
আইভীর বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মোট ছয়টি মামলা আছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মিনারুল হত্যা মামলায় আগামীকাল ২ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। গ্রেফতারের পর থেকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
আপনার মতামত লিখুন :