News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মডেলের টাকায় বিভক্ত বিএনপি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম মডেলের টাকায় বিভক্ত বিএনপি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ঘিরে যখন নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক আয়োজন চলছে তখন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের টাকায় খণ্ডিত হতে যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। শহর ও বন্দরের অন্তত অর্ধশত স্পটে ওই শিল্পপতির টাকায় কাঙালী ভোজের খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। আর এতে করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। হঠাৎ করে একটি অংশের নেতাকর্মীদের পকেটবন্দী করে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনকে ভালো চোখে দেখছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা।

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান আগামীতে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক পোস্টারিং করেছেন। অনুসারীরা বলছেন তিনি আগামীতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে লড়বেন। এও খবর বেরিয়েছে মাসুদুজ্জামান ইতোমধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিপরীতে তারেক রহমান জনকল্যাণে নিয়োজিত রাখতে মাসুদুজ্জামানকে আহবান করেছেন। সে কারণেই এবার কিছুটা আটঘাট বেধে মাঠে নামার পরিকল্পনা তাঁর। সে কারণেই জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ঘিরে তিনি বিএনপির একটি অংশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অনুসারী একজন তল্পিবাহককে দিয়ে বিভিন্ন এলাকার নেতাদের কাছে মোটা অংকের টাকা পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে শাহাদাত বার্ষিকীর আয়োজন করা হবে। কাঙালী ভোজের টাকার যোগান দিবেন মাসুদ।

বিএনপির নেতারা বলছেন, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না থাকা মাসুদ কদাচিৎ আর্থিক সহযোগিতা করেছেন সেটাও সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু তাই বলে মামলা হামলার শিকার নেতাদের উপর তিনি ছড়ি ঘুরাবেন সেটা তৃণমূল সহ্য করবে না। আর দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়া এভাবে টাকা বিলি করাতে বিএনপির ভেতরে অস্থিরতা যেমন বাড়ছে তেমনি দলও খন্ড হচ্ছে। বিভক্ত হচ্ছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ঈদের পর একটি মেজবান তথা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করবেন মাসুদ। সেখানে কয়েক হাজার লোকজন সমাগম ঘটবে। তখন তিনি রাজনীতিতে জড়াবেন কি না সেটা জানতে চাইবে। সাজানো নাটক মোতাবেক উপস্থিতিরাও দুই হাত তুলে সমর্থন জানাবেন। মূলত তখন থেকেই রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবেন এ শিল্পপতি নেতা।

এর আগে খবরে প্রকাশ পায় ‘‘ছিলেন একজন জাত ব্যবসায়ী। ৫ আগস্টের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। হয়েছিলেন চেম্বারের সভাপতি, কথা বলতেন বিকেএমইএ নিয়েও। কিন্তু চেম্বারের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই সদস্যদের অঘোষিত ‘লাল কার্ড’ পাওয়ার আগে নিজেকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে চলে বিকেএমইএ নিয়েও কলকাঠি। চেষ্টা করা হয় প্যানেল দিতে। তবে শেষতক আর হয়ে উঠেনি। পর পর দুটি ইস্যুতে কার্যত দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয় মাসুদের ক্ষেত্রে। অতীত এসব ঘুচিয়ে এবার নতুন করে আলোচনায় তিনি। পুরো শহরজুড়ে সাটিয়েছেন পোস্টার। নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানিয়েছেন ঈদ উল আজহার শুভেচ্ছা। স্টাইলটা রাজনীতিকদের মতই।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, মাসুদুজ্জামানের টার্গেট এবার জনপ্রতিনিধি হওয়া। সেটাকে সামনে নিয়েই আগাতে চান তিনি। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরেই তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এজন্যই আগাম প্রচারণা।

তবে বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা। তারা মনে করছেন ১৫ বছরে পুড়ে অঙ্গার বিএনপিতে টাকার জোরে আগামীতে মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেও এসেছে দূরদর্শিতা। রাজপথে থাকা হামলা মামলার শিকার কিন্তু স্বচ্ছ ও দলের প্রতি অগাধ আত্মত্যাগী নেতাই বসবেন যে কোন চেয়ারে। নতুবা দলের ভেতরে যেমন দেখা দিবে অস্থিরতা তেমনি কর্মীদের মধ্যেও আসবে হতাশা আক্ষেপ।

২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর নির্বাচন নিয়েও আলোচিত ছিলেন মাসুদ। তিনি লড়েছিলেন প্রভাবশালী সেলিম ওসমানের বিরোধী প্যানেলে। ভোটে তিনি পরিচালকও হয়ে যান। কিন্তু এর পরবর্তীতে আর বিকেএমইএতে নিজেকে জড়ায়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও দেখা দেয় দূরত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় বিকেএমইএ এর নির্বাচন। কয়েক মাস আগে একটি সংগঠনের নামে তিনি গোলটেবিল বৈঠক করে গার্মেন্ট মালিকদের এ সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনার পরোক্ষ ইঙ্গিত দেন। সমালোচনা করেন সেলিম ওসমান ও হাতেমের। তবে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। নির্বাচনের আগে একাধিবার প্যানেল ও ব্যবসায়ীদের একত্রিত করার চেষ্টা হলেও মাসুদকে সায় দেয়নি অনেকেই। ফলে অনেকটা বিনা বাধায় পরিচালক থেকে সভাপতি ও বিকেএমইএ এর নেতৃত্ব কব্জাবন্দী করেন হাতেম।

ওসমানদের বিরুদ্ধে এখন কথা বললেও উপ নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষেই তিনি ভোট চান। তল্লা এলাকাতে ১১নং ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত প্রচারণামূলক সভায় মাসুদ ও সেলিম ওসমান পাশাপাশি বসেছিলেন। বক্তব্য দিতে দিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষেই ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।

পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ এলাকার একটি জমি উচ্ছেদ করতে গিয়েও ওসমানদের সহযোগিতা নেন মাসুদ। এছাড়া চেম্বারের বিভিন্ন প্রকল্পে সেলিম ওসমানের হাতে দেন আর্থিক অনুদান।

৫ আগস্টের পর চেম্বারের সভাপতি হন মাসুদ। তবে গত ১৯ ফেব্রæয়ারী নির্বাচনে তিনি ছড়ি ঘুরাতে থাকেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি অন্য ব্যবসায়ীরা। নিজে মনোনয়নপত্র কিনেও শেষে সরিয়ে নেন। ব্যবসায়ীরা তখন নির্বাচনের পক্ষেই ছিলেন। মাসুদ লড়ছে ভোট হতো। কিন্তু কৌশলে নিজেকে সরিয়ে নেন। আবার এও আশঙ্কা ছিল ভোটে পরিচালক হলেও ১৯ পরিচালকের বেয়ারা ভোটে হোঁচট খেতে পারতেন তিনি।

কেউ কেউ বলছেন, আগামীতে কোন এক সময়ে হয়তো জনপ্রতিনিধি হতে চান এ ব্যবসায়ী। হতে পারে সেটা মেয়র কিংবা এমপি নির্বাচন। তবে সব কিছু নির্ভর করছে পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর।

এর আগে গত করোনাতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন মাসুদ। জেলার ১৭৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন মডেল গ্রুপ। প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যায় করে মডেল গ্রুপ তার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের সহযোগীতায় নারায়ণগঞ্জের শহরের বিভিন্ন এলাকা, রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্তকরন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের মেয়রকে ২০ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে ২০ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যকে ২০ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে ২০ লাখ টাকা, পুলিশ সুপারকে ১০ লাখ টাকা, আলাদাভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ১০ লাখ টাকা, মধ্যবিত্ত নাগরিক শ্রেনীর জন্য বিশেষ কমসূর্চীর ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কমীদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা, দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুকেক ৫ লক্ষ টাকা, মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামানের জন্মস্থান ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টুকে ২০ লক্ষ টাকা ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘোষনা ছিল যার বেশীরভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।’’

Islam's Group