এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সদস্য সচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলার মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেছেন, আসছে নির্বাচন নিয়ে আমাদের দল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আসনেই অফিসিয়ালি প্রার্থী সিলেক্ট হয়নি। রাজনৈতিক অনেকের আগ্রহ থাকতে পারে, তেমনি আমারও নির্বাচনের আগ্রহ আছে। তবে, দল যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটাই হবে, আমরা অবশ্যই নির্বাচনমুখী দল হবো।
নিউজ নারায়ণগঞ্জের এক টক শোতে তিনি এসব কতা বলেন।
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ থাকা সত্বেও জনগণ এনসিপিকে কেনো ভোট দিবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতা দেখতে গেলে নারায়ণগঞ্জে মানুষের পরিবর্তন হয়েছে, দল পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু মানুষ এ জেলাকে সন্ত্রাসীর জনপদ হিসেবে চেনে। নারায়ণগঞ্জ দ‚ষণের নগরী,অপরাধ প্রবণ এবং অন্যায় অবিচারের জেলা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যে কাজ শুরু করেছে মানুষ আমাদের ব্যাপারে আশাবাদী। আমরা মনে করি আমরা যদি মানুষকে এই মেসেজটা পৌঁছে দিতে পারি যে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ফরমেটে না গিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের রাজনীতিতে আমরা আসতে চাই। জনগণে বয়স,অর্থবিত্ত কিংবা অন্যান্য প্রভাব প্রতিবৃত্তি এগুলো ফলো না করে নতুন প্রজন্মের প্রতি আশাবাদী হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে এসপির সাথে বৈঠক বিষয়ে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল ইসলামের বাসায় অস্ত্রসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের দোসররা হামলা করেছে। এবং এনসিপির জেলা কমিটির লুবনা রহমানসহ দুই নারীকে সদস্যকে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এজন্যই মূলত যাওয়া। একই সাথে নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের হত্যার ঘটনাসহ এ জেলায় অনেক ঘটনা ঘটেছে। এবং আওয়ামী লীগের দোসর অনেকেই এখনো নারায়ণগঞ্জে রয়েছে। যারা নানানভাবে পূর্ণবাসিত হবার প্রচেষ্টায় আছেন। আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো নানান ভাবে তাদের পূর্ণবাসিত করার চেষ্টা করছে। মূলত এ ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি যদি প্রশাসন এ্যাকশনে না যায় তাহলে যারা বিপ্লবের পক্ষের ছিলেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন।
রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতা জাহিদুল বাবুর গুলিবর্ষণে এক ব্যবসায়ী মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলে, আমরা বিরোধী আন্দোলন করাকালীন সময়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল একসাথে ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে এসে আমরা দেখছি যে সন্ত্রাসের জনপদ নারায়ণগঞ্জ আবারও সন্ত্রাসের জনপদই থাকতেছে,শুধু মানুষগুলো পরিবর্তন হচ্ছে। এই জিনিসটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমাদের লজ্জার ব্যাপার এটা যে আমরা দেখছি আওয়ামী লীগ পুর্নবাসিত হচ্ছে বিএনপি'র পরিচয়ে। আবার আমরা দেখছি যে বিএনপির লোকজন নিজেরা নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনাটি হলো ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করা নিয়ে। ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে গিয়েই এলোপাতাড়ি গুলি করে ছাত্রদল নেতা। বিএনপি দাবি করতেছে যে ১৬ বছর ধরে তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করেছে। আমরাও তা স্বীকার করি। কিন্তু তারা ফ্যাসিবাদদের আবার পুনর্বাসন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। সেক্ষেত্রে তাদের গন্তব্যের যে ভ্যালু তা কিন্তু থাকছে না। মানুষের কাছে তাদের অবস্থান থাকছে না। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ‘বিবিসি বাংলায়’ একটি রিপোর্ট এসেছে যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির নারায়ণগঞ্জের একজন সদস্য ওসমান পরিবারসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পত্তি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য আমরা কখনোই চাইবো না যে বিএনপির ভাইয়েরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করুক।
বিএনপি তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ঠিকই কিন্তু সেটা পরে থাকে না। এক নেতা ব্যবস্থা নেয় আর আরেক নেতা প্রটেকশন দেয়। এধরনের ঘটনা নারায়ণগঞ্জ দেখা যায়। এমনও দেখা গেছে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ওই নেতার মিটিংয়েই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হোন।
এনসিপি পরিচালনায় অর্থের যোগান সম্পর্কে আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেছেন, দল পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন রয়েছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। তবে নারায়ণগঞ্জে এনসিপির পরিচয়ে কোন ধরনের ঠিকাদারি কোন ধরনের চাঁদাবাজিতে আমরা কাউকে জড়াতে দেইনি। সবাই জানে যে আমরা ছাত্ররা দল করি। আমাদের এখানে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ রয়েছে। আমাদের ৩১ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩-৪ জন ছাত্র বাকি সব পেশাজীবী মানুষ। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই আয় আছে। আমরা সবাই নিজেরাই ভাঙ্গি। যেমন আমরা এই কোরবানিতে নারায়ণগঞ্জের ২১ জন শহীদের নামে কোরবানি দিয়েছি এবং সেটা তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এটা আমাদের কমিটির সদস্যদের নিজস্ব অর্থে।
আওয়ামী লীগ আমলে নিজের পিতা এবং তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এই নেতা বলেন, আমার বাবা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারী ছিলেন। এটা আমার বাবার রাজনৈতিক পরিচয়। আওয়ামী লীগ আমলে মানুষকে অযথা মামলা দেওয়া হতো। সেইভাবেই আমার বাবা রাজনীতিবিদ হওয়ায় তাকে অন্তত ডজনের উপর মামলা দেওয়া হয়েছে এবং আমি তার সন্তান হওয়ায় ১৬-১৭ টা মামলা আমাকে দেওয়া হয়। অথচ আমি নিকে একজন এডভোকেট।
আপনার মতামত লিখুন :