ইন্টেরিম রিমেম্বার ইলেকশন ইন ডিসেম্বর স্লোগান দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায় করার ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাঝে বৈঠকের পর আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছেন।
জুলাই বিপ্লবের পর আগামী নির্বাচনে বড় দল গুলোর মধ্যে সব থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি, এরপরের অবস্থানেই রয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। আর ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক ভবিষ্যত অবস্থা এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত বড় দল হয়ে উঠতে পারেনি বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে ভোটের লড়াইটা বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মাঝেও হতে যাচ্ছে বলে ধারণ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যে নির্বাচনে নেমে পড়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্যপ্রার্থীরা। জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্যপ্রার্থীরা যেখানে গণসংযোগ শুরু করে সাধারণ ভোটারদের দ্বারে যাওয়া শুরু করেছেন বিপরীতে বিএনপিতে এখন পর্যন্ত নিজেদের মাঝের প্রতিদ্ব›দ্বীতাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রায় প্রতিটিতেই একের অধিক কোথাও কোথাও ৩জন প্রার্থী নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে কেন্দ্রের নজরে আসার চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও নির্বাচনকে টার্গেট করে বিশাল অর্থ ব্যয়ের উৎসব শুরু হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে কারা প্রার্থী হবেন সেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তাই বিএনপির নেতারা বারবার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো প্রার্থীতা নির্বাচনে পিছিয়ে রয়েছেন।
তথ্যমতে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের মাঠে একধাপ এগিয়ে রয়েছে জামায়াত। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে বিভিন্ন জেলার মতো নারায়ণগঞ্জেও ৫টি আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।
জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ (রুপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করবেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা। তিনি ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) থেকে নির্বাচন করবেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়নের সাবেক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সমাজকল্যান সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে নির্বাচন করবেন কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভুঁইয়া। তিনি এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা) থেকে নির্বাচন করবেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল জব্বার। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নির্বাচন করবেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ। প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকে তারা রাজপথে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে জামায়াতের এসব সম্ভাব্যপ্রার্থীরা আসন্ন নির্বাচনকে টার্গেট করে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষদের মাঝে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। আড়াইহাজারে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীর গণসংযোগে হামলাও চালিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং কাজী মনিরুজ্জামান মনির। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। একই সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন। আর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান এগিয়ে থাকলেও এক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। একই সঙ্গে গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি পদে লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন। একই সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। গত ৩ এপ্রিল ফতুল্লা থানা বিএনপি অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক বৈঠকে শাহ আলমও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এদিকে সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে। এই আসনে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানও নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। নতুন করে প্রার্থী তালিকায় যুক্ত হয়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। ইতোমধ্যে অন্য দুই প্রার্থী মাসুদজ্জামানকে নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাকে সু-সময়ে মধু খেতে আসার কথা বলেও ব্যঙ্গ করেছেন। তবে এসব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর মনোনয়ন প্রত্যাশা গত ১৩ জুন নগরীর বরফকল মাঠে বিশাল মেজবানির আয়োজন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। যেখানে বিএনপি সহ জামায়াতে ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :