নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সম্মেলন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়ে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের নেতারা হয়তো চাইবেন না সংসদ নির্বাচনের আগে জেলার সম্মেলন নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে। সকলেই সংসদ নির্বাচনকেই বেশি অগ্রাধিকার দিবেন।
যদিও নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা চাইছেন যে কোনোভাবেই আগামী কিছুদিনের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করাতে। সেই সাথে আইনজীবী ফোরামের নতুন কমিটি নিয়েই সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে থাকবেন। তবে নারায়ণগঞ্জ আদালতের নীতি নির্ধারণী ফোরামের আইনজীবীদের ইচ্ছার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে এই সম্মেলন। তারা চাইলে সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে পারে।
সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ পতনের পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা সরগরম হয়ে উঠে। সেই সাথে দিন যাওয়ার সাথে সাথে আলাপ আলোচনা আরও বেশি সরগরম হয়ে উঠে।
এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলে পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন মাঠে ব্যস্ত গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে।
আর এই সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন কোনো কমিটি আসার সম্ভাবনা থাকছে না। যার ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সম্মেলন নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের আইনজীবীদের বক্তব্য হচ্ছে- জাতীয় সংসদ নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সম্মেলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা আমাদের মতো করে স¤েøলনের আয়োজন করবো। এখানে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সম্মেলনের আয়োজন করবো আর কেন্দ্রীয় নেতারা এসে পর্যবেক্ষণ করবেন।
আদালতপাড়া সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হঠাৎ করেই গত ১২ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই কমিটি বাতিল করা হয়।
সেই সাথে গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এই কমিটিতে আহŸায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন. সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট বেনজির আহমেদ এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুল গাফফার।
সেই সাথে যুগ্ম আহŸায়ক হিসেবে রয়েছেন-অ্যাডভোকেট জহিরুল হক, অ্যাডভোকেট মেহেবুব আরেফিন শিমু, অ্যাডভোকেট কারসার আলম চৌধুরী টুটুল, অ্যাডভোকেট আসমা বিথি, অ্যাডভোকেট শামছুন নুর বাঁধন। তাদেরকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এই কমিটি সর্বোচ্চ ৩১ সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
আর এই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি বাতিল ও নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই সম্মেলন নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা চলমান রয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করার প্রত্যাশা নিয়ে অনেকেই নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দিয়ে আসছেন। সেই সাথে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের আলোচনায় রাখছেন। একই সাথে আদালতপাড়ায় বিভিন্ন বলয় গড়ে উঠেছে।
এর আগে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুইটি প্যানেল ঘোষণা দেন। একটি প্যানেলের প্রতিদ্ব›দ্বীতায় ছিলেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন, সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সীমা সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আলী হোসাইন।
অন্য প্যানেলের সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির, সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আজিজুল হক হান্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন। সম্মেলন শেষে তাদের জয় হয়।
এরপর ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ১২৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আর এই কমিটিতে গত ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত ৫জনকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। সেই সাথে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ওইদিন থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। সে হিসেবে ওইদিনই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :