News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচিত জাকির খান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ১০:৪২ পিএম স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচিত জাকির খান

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সমালোচিত বিএনপি নেতা জাকির খান। রয়েছে বিপুল সংখ্যক অনুসারী। অনুসারীদের কাছে তিনি নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা। আর নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের কাছে তিনি বিতর্কিত হিসেবেই বেশি পরিচিত। তার অনুসারীদের কেউ তাকে দেখতে চান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি হিসেবে। আবার কেউ কেউ দেখতে চান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে। তবে জাকির খান চান নারায়ণগঞ্জকে মাদক মুক্ত রাখতে।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে জাকির খান। মুক্তির পর বিশাল শোডাউন দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করেন জাকির খান। মুক্তি লাভের পর জাকির খানের নাম কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে না জড়ালের আলোচনার মধ্যেই রয়েছে জাকির খান। তবে সেই আলোচনা তার অদ্ভুত আচরণের জন্য। তার অদ্ভুত আচরণের কারণে রীতিমত তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ট্রলের ট্রেন্ডিংয়ে চলে এসেছে।

কখনো তিনি নিজের কমন সিগনেচার সাইন আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দিয়ে ট্রল হচ্ছেন, কখনো হাইওয়ে সড়কে জনশূন্যতার মাঝে রেঞ্জরোভার গাড়ির ছাদ খুলে হাতের সাথে পা বের করে দিচ্ছেন, কখনো বক্তব্য রাখতে গিয়ে উলটপালট বলে ট্রলের ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসছেন।

বর্তমানে ট্রল করার জন্য যে কয়কটি আলোচিত পেইজ রয়েছে যেমন, আনোয়ার টিভি, প্রথম আলু, দিল্লিস্টার, ঝামেলা টিভি সহ নানান পেইজ থেকে প্রতিনিয়ত জাকির খানকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় প্রকাশ করা জাকির খানের রিলসে দেখা গেছে নিজ বাড়িতে মেজবানির আয়োজনের রান্না দেখতে গিয়ে রান্না ঘরে দুই হাত আকাশ পানে তুলে ধরেছেন। যেখানে ওই রান্না ঘরে কোন মানুষ ছিল না, শুধু মাত্র রান্নার ডেগ ছাড়া। আবার কখনো বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে চাঁদপুর যাওয়ার সময় পথিমধ্যে রেঞ্জরোভার গাড়ির ছাদ খুলে আকাশ পানে দুই হাত প্রসারিত করে ধরতে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে পা বের ফেলতে চাইছেন।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাশের থেকে শিখিয়ে দেওয়া কথাবার্তাও বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন তিনি। সেসব নিয়েও ট্রলের শিকার হচ্ছেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অগোছালো ভাবে বলে ফেলছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী নির্বাচন হবেই হবে। এমনকি নারায়ণগঞ্জকে মাদক মুক্ত করতে চাওয়ার বক্তব্যকেও ওই সকল পেইজ গুলো থেকে নানা ভাবে ট্রল করা হচ্ছে।

এদিকে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাকির খান কোথাও গেলে উপর দিকে দুই হাত তুলে দেওয়ার পেছনেও তাকে পরিচালিত করা হয়। তার সাথে থাকা লোকদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ইশারা দিলেই তিনি অনুসারীদের উদ্দেশ্যে হাত তুলে দেন।

জাকির খানের এমন কর্মকান্ডের সমালোচনা তৈরি হয় নিজ অনুসারীর সহ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের ভাষ্যমতে, জাকির খান অতীতে যেমন ছিলেন বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান এখন পর্যন্ত সরাসরি কোন বির্তকিত কর্মকান্ডে যুক্ত হয়নি। তার নাম ভাঙিয়ে যারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করেছে বা করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। যেহেতু তিনি বক্তব্য গুছিয়ে বলতে পারেন না সেখানে তাকে জোর করে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা সহ তাকে ভুল ভাবে পরিচালনা করার ফলেই তাকে নিয়ে এতো সমালোচনা ও ট্রল করা হচ্ছে। তার অনুসারীদের উচিত এই বিষয় গুলো শুধরে নিয়ে জাকির খানকে আরো সুক্ষ ভাবে পরিচালনা করা।

উল্লেখ্য ওসমান পরিবারের হাত ধরেই রাজনীতিতে জাকির খানের রাজনীতিতে আর্বিভাব ঘটে। ১৯৮৯ সালে প্রয়াত নাসিম ওসমানের হাতে ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজে যোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্ধর্ষ হিসেবে শহরে পরিচিত পান জাকির খান।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড  হয় এবং তিনি জেলে যান। আওয়ামী লীগের ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে।

১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করলে জাকির খানের পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায় বলে সেসময় খবর ছড়ায়। বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া শুরু করলে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার কারাবন্দি হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি জেলে থাকেন।

২০০৩ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন অপারেশন ক্লিন হার্ট চলাকালীন সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কিনে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তবে দীর্ঘ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলে নারায়ণগঞ্জে তার অনুসারীরা জাকির খানের নামের আতঙ্ক বজায় রেখে ছিলো।

উল্লেখ্য, সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।

সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে তিনি নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।

দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১ এর একটি অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলো।  এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান এবং ১৩ এপ্রিল কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে জাকির খান।

তবে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের অনেক আগে থেকেই জাকির খান ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পাশাপাশি তিনি তার ছোট ভাই জিকু খানের বিয়েতে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে এসেছিলেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এসব খবরে প্রশ্ন উঠে যে জাকির খান বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকারের আমলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন, সেই জাকির খান সত্যি যদি আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকতো তাহলে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে এসে কিভাবে অবস্থান নিলেন।

তবে এসব ঘটনার পূর্বে সাবেক এমপি শামীম ওসমান এবং জাকির খানের মধ্যে অন্তরালে রাজনৈতিক অনেক কুটচালের আভাস পাওয়া গিয়ে ছিলো। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সেই কুটচাল আর সফল হয়ে উঠেনি।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে জাকির খান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমান জাকির খানকে দলে বেড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। জাকির খানের প্রশংসা করে প্রকাশ্যে বেশ কয়েকবার শামীম ওসমানকে বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে। যে সকল বক্তব্য এখন এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। ওই বক্তব্যে শামীম ওসমানকে বলতে শোনা গেছে, দেওভোগে একটি ছেলে ছিল, তার নাম জাকির হোসেন, সবাই তাকে জাকির খান বলে। ভাল ছেলে ছিল, বেয়াদব ছিলনা। কিন্তু তাকে বিএনপি এনে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে।

জাকির খানকে নিয়ে শামীম ওসামনের দেওয়া এমন বক্তব্যে প্রেক্ষিতে সে সময় অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এবার জাকির খানকে রাজনীতিতে নিজের দলের ভিড়াতে চাইছেন শামীম ওসমান। যাতে করে দেওভোগ এলাকাতে তার নিজের কর্তৃত্ব গড়ে তুলতে পারে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবেক মেয়র আইভীকেও কোনঠাসা করতে পারে রাজনৈতিক ভাবে।

Islam's Group