বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ২৪৮ জনকে আসামি করার পর একাধিক নোটারীর মাধ্যমে আসামিদের অব্যাহতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। মামলার বাদী আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের ১নং আহবায়ক সদস্য রতন মিয়া (২৮)। তার ভাষ্য, “ভুলবশত” কিছু নাম তিনি মামলায় যুক্ত করেছিলেন।
রতন মিয়া মূলত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান জিকুর অনুসারী। রতন মূলত জিকুর নির্দেশনাতেই রাজনীতি করে।
জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে রতন মিয়া গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ২৪৮ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ আমলী ৪নং আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া চলার মাঝেই একাধিক নোটারীর মাধ্যমে তিনি ধাপে ধাপে বিভিন্ন আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
হলফনামায় রতন মিয়া উল্লেখ করেন, “সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝির কারণে উক্ত আসামীগণকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও নন। তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেলে আমার কোনো আপত্তি নেই।” তিনি আরও অনুরোধ জানান, এসব আসামিকে যেন পুলিশ গ্রেফতার বা হয়রানি না করে।
তবে এ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, “ভুলবশত” ৩০ জনের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাখ্যা বাস্তবসম্মত নয়। অনেকে বলছেন, বাদী হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করেছিলেন, পরে অর্থের বিনিময়ে বা অন্য প্রভাবে তাদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
নোটারী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ নভেম্বর এক হলফনামায় বাদী ১৫৫নং আসামি তমাল মোল্লা (৩০), ২৪৭নং আসামি হিমেল মোল্লা, ২৪৮নং আসামি মামুন মোল্লা এবং ৮৪নং আসামি সালাম (৪০) এর নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেন।
এরপর একই বছরের ৮ অক্টোবর আরেক হলফনামায় ২৪৪নং আসামি আব্দুল হক মিয়া (৫৫), এবং ২৬ অক্টোবর আরেক নোটারীতে আওয়ামী লীগ নেতা লাক মিয়া (৫৫), আক্তারুজ্জামান সুমন (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), সবুজ মোল্লা (৩৫), বাদশা মিয়া (৫০), রাকিব মিয়া (২৪), ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল শাহরিয়ার হীরা (২৮), আজমীর ভুঁইয়া, সজিব (২৫), নুরুজ্জামান (৩৫), মারুফ (২৬), রাজিব মিয়া (৩০), মনির কমিশনার (৪২) প্রমুখের নাম বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
পর্যায়ক্রমে আরও একাধিক নোটারীতে ৫৪নং আসামি শাকিল (৩০), ৯৬নং আসামি সুমন (৩৮), ১১২নং আসামি মাসুদ (৩০), ১১৫নং আসামি বাদল (৩৩), ১১৭নং আসামী আল আমিন (৩৫), ১১৮নং আসামী আ. আজিজ (৪০), ১২৯নং আসামী রুহুল আমিন (৩০), ১৪৩নং আসামী শাহিন (৪৪), ১৪৪নং আসামী হেলাল (৪৭), ১৬৯নং আসামী শফিকুল (৪০), ১৭০নং আসামী সেলিম মেম্বার (৪০), এবং ১৭১নং আসামী নজরুল (৪০)-এর নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মামলাটির মাধ্যমে শুরু থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কিনা, নোটারীগুলোর বিষয়টি তা আরও স্পষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী রতন মিয়াকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর তিনি বিস্তারিত জানাচ্ছেন। এরপর তাকে একাধিকবার কল দিলে তিনি আর ফোনটি রিসিভ করেনি।
আপনার মতামত লিখুন :