News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

অবৈধ ঘাতক বাসের নিয়ন্ত্রক বিএনপি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১০:০২ পিএম অবৈধ ঘাতক বাসের নিয়ন্ত্রক বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ শহরে চলাচলকারী মৌমিতা পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শহরজুড়ে দাবড়িয়ে চলাচল করে থাকে। যেখানে যেখানেই তারা যাত্রী উঠানামা করে থাকে। ফলে নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণও হচ্ছে মৌমিতা পরিবহনের বাস।

আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন এই মৌমিতা পরিবহনের বাস আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিজেদের ক্ষমতার জোরে যাতায়াত করতো। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরে মৌমিতা পরিবহনের বাসের চলাচলে যুবদল নেতা শেল্টার দিয়ে আসছেন। ওই যুবদল নেতা তার বাহিনী দিয়ে মৌমিতা পরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কোনো কোনো নেতাও শেল্টার দিয়ে থাকেন। আর তাদের শেল্টারে মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো যেন একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের কোথাও না কোথাও দূর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তাদের যেন কোনো নিয়ম-নীতির মানার প্রয়োজন হয় না।

সবশেষ ৬ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় মোজাম্মেল হক (৫৫) নামে এক পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে দুই ইজিবাইক চালক গুরুতর আহত হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইজিবাইকটি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় মৌমিতা পরিবহনের বাসটি বেপোরোয়াভাবে এসে ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দেয়। শুধু ধাক্কা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ইজিবাইকটিকে ঠেলে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষজন বাসটিকে থামানোর জন্য চিৎকার দিলেও চালক বাসটিকে থামায়নি। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষজন একত্রিত হয়ে বাসটিকে আটকিয়েছেন।

আর এভাবেই প্রতিনিয়তই মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো শহরজুড়ে দাপটের সাথে চলাফেরা করে থাকেন। সেই সাথে প্রতিনিয়তই ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটছে। যা সচরাচর আলোচনায় আসে না। কিন্তু যিনি ভুক্তভোগী হন তিনি ঠিকই উপলব্দি করতে পারেন মৌমিতা পরিবহনের বাসের নৃশংসতা। বাসের ভিতরেও অনেক সময় অপরাধমূলক কার্যকলাপ হয়ে থাকে। ফলে এই বাসগুলোকে অনেকে ঘাতক বাস হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকে।

একই সাথে এই মৌমিতা পরিবহনের বাস গুলো শহরের যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। এই পরিবহনের প্রায় ১৬০ টি বাস খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের সামনে থেকে প্রতি ৫ মিনিট পর পর ছেড়ে আসে। ধীরগতিতে চলতে চলতে চাষাঢ়া চত্বরে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠাতে থাকে। একের পর এক আসতে আসতে ৪ থেকে ৫ টা বাস চাষাঢ়া এসে গোটা চত্বরটাই দখলে নিয়ে নেয়।

ফলে ঢাকা ও ফতুল্লামুখী পথ বন্ধ হয়ে মৌমিতা বাসের পেছনে সব গাড়ি আটকা পড়ে। শুরু হয় যানজট। নিমিষেই তা গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে থেকে স্থবির হয়ে যায় নাগরিক জীবন। এই পরিবহনের কোন টিকেট কাউন্টার নেই।

বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌমিতা পরিবহনের মালিক জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কালু শেখ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে তার নিজ ক্ষমতাবলে ঢাকা থেকে রুপ পারমিট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রবেশ করে। সেই সাথে তারা তখন থেকেই কোনো নিয়ম-নীতির ধারধারি না। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই শহরজুড়ে দাবড়িয়ে বেড়িয়েছে। কোনোভাবেই তাদের যেন থামানো যায়নি।

এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাকফুটে চলে যায়। তাদের পরবর্তে বিভিন্ন সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে আসে বিএনপি নেতারা। তারই অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শহরে চলাচলকারি মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলোরও নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি নেতারা। তারা মৌমিতা পরিবহনকে শেল্টার দিয়ে আসছেন।

যার ধারাবাহিকতায় মহানগর যুবদলের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলোকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চলাচলের ক্ষেত্রে শেল্টার দেয়ার দায়িত্ব দেন। তিনি বিনিময়ে প্রতিদিন মালিকপক্ষ থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে নেন। ওই নেতার অধীনে ছয়জন লোক কাজ করে থাকেন। তাদেরকেও প্রতিদিন ক্যাডারি ভাতা দেয়া হয়। যারা যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত।

পাশাপাশি মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতাকে মাসে এককালিন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। যেটা পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন। আর তাদের শেল্টারেই মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো বেপোরোয়াভাবে চলাচল করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও বেপোরোয়া ছিলো এখনও তারা বেপোরোয়াভাবেই চলাচল করছে।

Islam's Group