মাত্র একজন বসতে পারে এমন একটি চার ফুট প্রস্থের দোকান আর ৩৬ এর বেশি রকমের মুড়ির আইটেম। চোখে স্বপ্ন ছিল একদিন এই দেশের অস্বাস্থ্যকর তেলে তৈরি খাবারের প্রেক্ষাপট বদলে দেবেন। স্বপ্ন পূরণের এই পথ চলায় এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি ও অপবাদ। তবুও নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এসেছেন ৫টি বছরে। আর এই পাঁচ বছরের ‘মুড়ি মামা’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন সর্বত্র। আজ প্রায় ৩৬ ধরনের মুড়ির আইটেম নিয়ে গড়তে চাইছেন ওর্য়াল্ড রেকর্ড। গিনেস ওর্য়াল্ড রেকর্ড এ ঠাই পেতে করা হয়েছে আবেদন।
জানা গেছে, ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে অক্টো অফিসের মোড় এলাকায় একটি ছোট্ট দোকানে ‘মুড়ি মামা’ নামের নিজের ব্যবসা দেন জাহাঙ্গির আলম। শুরুর দিকে মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালানো কষ্টকর হলেও ৫ বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এখন প্রতিদিনই মুড়িমামা’র দোকানে ভোজন রসিকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। শুধু নারায়ণগঞ্জই নয় রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুড়িমামার মুড়ি খেতে ছুটে আসছেন ভোজনরসিকরা। আর আসবেই না কেন কারণ মুড়িমামার মতো ৩৬ ধরনের মুড়ির আইটেম অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া দুস্কর। ভিন্ন ধরনের এই মুড়িতে ক্রেতাদের সাড়া ও পাচ্ছেন ব্যাপক। ক্রেতাদের ভিড়ে সকাল ১০ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন মুড়ি মামা। আশেপাশের স্কুল-কলেজ ও কোচিং সেন্টার ছুটি হলেই আড্ডা বাড়ে মুড়ি মামার দোকানে। শুধু শিক্ষার্থী নয় এই আড্ডায় হাতে মাটির পাত্রে বাহারি রকমের মুড়ি নিয়ে মেতে থাকেন অভিভাবকরাও। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি অন্তত কয়েক শতাধিক ভোক্তা ভিড় করছে মুড়ি মামার দোকানে। রাজকীয় মুড়ি, রেজালা মুড়ি, চিকেন মুড়ি, শাহী মুড়ি, চিকেন কিমা মুড়িসহ ৩৬ ধরনের মুড়ির আইটেমের রেসিপির আবিষ্কারক তিনি নিজেই। এই মুড়ির দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের মুড়ি মামার ৩৬ রকমের মুড়ি নিয়ে গ্রিনেড ওয়াল্ড রেকর্ডে আবেদনও করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০২১ সালে যখন শুরু করি মাত্র ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকা সেল ছিল।অনেকে পাগল বলসে বাসা ভাড়া দিতে চায়নি।অনেক ধরনের অপমান সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার ব্যবসাটা একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল তখন আশপাশের মানুষ এখন দোকানে আসে আমার সঙ্গে সেলফি তোলে। মুড়ি মামার বিজনেস শুরুর আগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে জব করছি, প্লাম্বার ছিলাম ইলেকট্রিশিয়ান ছিলাম অনেক ধরনের জব করসি। ছোটবেলায় বাবা মা মারা যায়। ছোটবেলা থেকেই স্ট্রাগল করসি।
বর্তমানে আমি টোটাল স্ট্রিট ফুডকে নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে ৬ হাজার বেকার যুবক যুবতীকে কাজ শিখাবো ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিব। আমার খাবারে কোন টেস্টিং সল্ট ও পোড়া তেলসহ অস্বাস্থ্যকর উপাদান থাকবেনা। এখন অনেকে আমাকে দেখে বিশেষ করে চিটাগাং মিরপুরে ঢাকাতে অনেক জায়গায় খিচুড়ির বিসনেস দিসে চায়ের বিসনেস দিসে। আমি চাই সকলে স্থাস্থ্যসম্মত খাবার খাবে এতে কোন ধরনের রোগ হবেনা। জনগণকে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ২০৩০ সাল পর্যন্ত টার্গেট নিসি। স্কুল গেট থেকে ঝালমুড়িসহ বিভিন্ন খাবার থাকবে। বিশেষ করে আমরা হোমমেড ফুডগুলোকে প্রাধান্য দিব। স্ট্রিট ফুডগুলোতে ভেজালে ভরে গেছে। হোমমেড খাবারের কোন বিকল্প নাই। আমি হোমমেড খাবারগুলোকে প্রমোট করতে চাই। আমার মুড়ি মামা পেজের ফলোআর সবাই আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
তিনি জানান, তার দোকানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। প্রতিদিন সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ গ্রাহক আসেন। আমার বানানো মুড়ির মোট ৩৬টা আইটেম আছে প্রতিটা আইটেমে আমার নিজের আবিষ্কার করা। বিভিন্ন দামের বিভিন্ন ধরনের এই মুরগিগুলো মানুষ খুব বেশি পছন্দ। এখানে রাজকীয় মুড়িটা সবচেয়ে বেশী ফেমাস। সারা বাংলাদেশ থেকেই ভোক্তারা আসে। চিটাগাং এর অনেক ভোক্তারা আসেন। ঢাকার অনেকে আসেন। অনেকে বিজনেস শুরু করতে পরামর্শ নিতে আসেন। নারায়ণগঞ্জে ৬ হাজার উদ্যোক্তো তৈরীর জন্য তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তাদেরকে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরীর জন্য কাজ শিখানো হবে। মাত্র ৪ ফুটের একটি দোকানে ব্যবসা শুরু করে আজকে আমি স্বাবলম্বী। অনেকেই অনেক কথা বলসে। কিন্তু এই দোকান থেকে আমি ওয়ার্ল্ড এর একটি অন্যরকম ফেমাস জায়গায় চলে যাচ্ছি। এবং ওই পর্যন্ত পৌছানোর অপেক্ষায় আছি।
ভোক্তারা জানান, এখানে প্রায়ই মুড়ি খেতে আসেন। অনেক সময় একা আসেন আবার কখনো কখনো বন্ধুদের নিয়েও খেতে আসেন। ঝালমুড়ির ডিফারেন্ট ভার্সনটা মুড়ি মামার এখানেই পেয়েছেন। মুড়ি মামার মুড়ি অত্যন্ত সুস্বাদু।
আপনার মতামত লিখুন :