নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও একসময়ের রাজপথ কাঁপানো নেতা মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এখনও যেন তার জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই যেন খোরশেদের অনুসারীরা তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে নামলেই তার অনুসারীদের সাড়া মিলে। যেখানে শিল্পপতিরা বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছেন নেতাকর্মীদের পিছনে সেখানে খোরশেদ কোনো রকম টাকা খরচ ছাড়াই একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পরপর কয়েকটি কর্মসূচিতে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। প্রায় প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের ব্যাপক সাড়া মিলছে। সেই সাথে প্রত্যেকটি কর্মসূচিই জনসম্পৃক্ততা মূলক হয়ে উঠেছে। ফলে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা সহ সাধারণ মানুষজনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে দুই শিল্পপতির লড়াই চলছে। আর তাদের এই লড়াইয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা ছড়ানো হচ্ছে। সেই টাকা ছাড়ানোতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকার বিপরীতে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যেন কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই অনুসারীদের ধরে রেখেছেন। একই সাথে একের পর এক সাড়া জাগানো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
সবশেষ বন্দর থানা ও উপজেলা বিএনপি, যুবদল, কৃষকদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নাসিকের অন্তর্গত বন্দরের ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে মিছিল, গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ১৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরদেশ। এ সময় তিনি নিজেই বাংলাদেশ ও বিএনপির নামে স্লোগান ধরে নেতাকর্মীদের মিছিলে উজ্জীবিত করেন। মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর বিকাল ৩ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে তার নেতৃত্বে মিছিল, গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে গণসংযোগ করছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতা ৭ অক্টোবর শহরের কালীরবাজার এলাকায় এই লিফলেট বিতরণ করেন তিনি। এসময় কালীরবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানে ও ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ৩১ দফা দাবী সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। এসময় ৩১ দফা সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন এবং এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য আহবান জানান খোরশেদ। একই সাথে এদিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রার্থী হওয়ার কথাও জানান মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
একই সাথে নারায়ণগঞ্জে পাঁচ দফা দাবীতে নগরভবন ঘেরাও ও সিটি করপোরেশনে স্মারকলিপি প্রদান করেছে ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জ। গত ৮ অক্টোবর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় নগরভবন ঘেরাও করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে জনভোগান্তি বিহীন পরিকল্পিত উন্নয়ন, মেট্রোরেল বাস্তবায়ন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্গন্ধ বিহীন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না করা পর্যন্ত পানি কর প্রত্যাহার, গলাচিপা জামতলা মাসদাইর ও গুদারাঘাট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের পাঁচ দফা দাবী পেশ করেন ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এই প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করার মতো উপস্থিতি ছিলো।
৭ সেপ্টেম্বর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জ এর আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ শহর, আদমজী, মদনপুরকে মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-২) প্রকল্পে যুক্ত করার দাবীতে শহরের প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেন। আর তার এই ডাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ নানা প্রেণী পেশার শীর্ষস্থানীয়রা উপস্থিত হন।
নারায়ণগঞ্জের কল্যাণে তার আহবানে সাড়া দিয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন এক কাতারে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সকলেই এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সাথে সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে খোরশেদের দাবীতে একাত্মতা পোষণ করেছেন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চার বারের নির্বাচত কাউন্সিলর হচ্ছেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। ২০০৩ সালে পৌরসভার নির্বাচন দিয়ে তার শুরু হয়। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরতে হয়নি। পরের ২০১১, ২০১৬ ও সবশেষ ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী নির্বাচনে তিনি সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সাথে খোরশেদ এখন সারাদেশে একটি আলোচিত নামে পরিণত। করোনার ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করলে দাফন, সৎকার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এগিয়ে ছিলেন খোরশেদ।
করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে মৃত ব্যক্তিদের লাশ পড়েছিল বাড়ির আঙিনায়, সিঁড়িতে। সংক্রমণের ভয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেউ লাশ দাফনে এগিয়ে আসেনি। ওই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফন ও সৎকারে এগিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। মাকছুদুল ও তাঁর দল টিম খোরশেদ একে একে দেড় শতাধিক জনের লাশ দাফন করেন। মৃতদেহ সৎকারে মুখাগ্নি করেছেন কয়েকজনের। করোনার শুরু থেকে হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরী ও বিতরণসহ নানা উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে ছিলেন আলোচিত এই কাউন্সিলর।
বিএনপি দলীয় রাজনীতি করতে গিয়েও নানাভাবে খোরশেদ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪৯টি। বিগত দিনে হরতাল অবরোধ চলাকালে সামনের সারিতে থাকা এ যুবদল নেতাকে এখন পর্যন্ত কারাবন্দী হতে হয়েছে ১০ বারের মত। এছাড়া জেল গেট থেকেও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকবার। মহানগর যুবদলের সেক্রেটারী থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে খোদ প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর সক্রিয়তাকে স্বীকার করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :