আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে স্পষ্টভাবে নির্বাচনী উত্তাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আলোচনা ও তৎপরতায় সরব অবস্থান ধরে রেখেছেন। তারা একদিকে যেমন নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের প্রচার প্রচারণা বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে একই আসনে অন্যান্য প্রার্থীদের সমালোচনা করে সরব অবস্থান জারি রেখেছেন। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য রয়ে সরগরম মহানগরের রাজনীতি। বিরোধী দল ছাড়াই একে অপরের বিরুদ্ধে করছেন কাদা ছোড়াছুঁড়ি।
সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে প্রার্থীতা করতে চাওয়া বিএনপি নেতাদের নিয়ে সমালোচনায় বেশ সক্রিয় এই দুই নেতারা। নিজেদের বলয় ভারী করতে যুক্ত করেছেন আরেক ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুলকে। যদিও এই আসনে সাখাওয়াত, টিপু, বাবুল প্রত্যেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে তাদের লক্ষ্য এক। আর সেটা হচ্ছে মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ঠেকানো। নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিয়ে সমালোচনা প্রকাশ্যে চলায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ ও যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব পুরো প্রক্রিয়ায় অনেকটাই নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে তারা কোন প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। উভয়েই নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও দলের ভেতরে থাকা ভিন্ন প্রার্থীদের নিয়ে কোন সমালোচনা বা বিষেদাগার করছেন না। নীরবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে অন্যায়ন প্রার্থীদের কাজ করে যেতে এক প্রকার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। মহানগর এবং জেলা বিএনপির নেতাদের দ্বিমুখী অবস্থানে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্নও উঠেছে।
দলীয় সূত্র বলছে, জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের এই এই বিপরীত আচরণ সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও অদক্ষের পার্থক্য পরিস্কার করে দেয়। নেতৃত্বে অভিজ্ঞতার পরিচয় কে দিচ্ছে আর কে দিচ্ছে না তাও পরিস্কার হয়ে যায়। কোন নেতাদের কথাবার্তায় দল উল্টো ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা কর্মীরা সহজেই ধরতে পারে। আর যেসব নেতারা দলের ইমেজ রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নেতিবাচক আলোচনায় জড়াতে চান না, তারা স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীদের কাছে সম্মানের পাত্র হিসেবে বিবেচিত হন। একই সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখেও পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তারা।
সূত্র বলছে, জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই আসনে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান, গিয়াস উদ্দিন, রেজাউল করিমের মত হেভিওয়েট বিএনপি নেতারা। যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে জন প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবার অভিজ্ঞতা। জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে থাকা মামুন মাহমুদ স্বাভাবিক ভাবেই একটি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য দাবীদার। তবে সেজন্য তিনি কোন বিষেদাগার বা দলের কোন নেতার বদনামের পথকে বেছে নেননি।
একই চিত্র দেখা গেছে জেলার যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীবকে। তিনি নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। একই আসনে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সাবেক মনোনয়ন পাওয়া নেতা শাহ আলম। এমনকি সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীও ধীরে ধীরে আলোচনায় এগিয়ে আসছেন। অথচ তাদের নিয়ে কোন টু শব্দও করেননি রাজীব। বরং প্রত্যেকের অবস্থানকে সম্মান করে তাদের কাজ করে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। নিজেও কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যার কারনে রাজীব অনুসারী ও অনুসারী নন সকলের কাছেই সমান চোখে শ্রদ্ধার পাত্র হচ্ছেন।
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির দুই নেতা প্রতিনিয়ত বিষেদাগারে ব্যস্ত। দলের ইমেজ যে এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য নেই একটুও। বরং ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছেন তারা ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্র থেকে এখনও স্পষ্ট কোনো বার্তা না আসায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিনিত একে অপরের বিষেদগারের রাজনীতিতে মেতে উঠেছেন তারা। অন্যদিকে নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাচ্ছে জামায়াত, এনসিপির মত দলগুলো। যারা বিতর্ক এড়িয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কাজে মনোযোগী হয়েছেন। মহানগর ও জেলার নেতৃত্বে পার্থক্য আগামী নির্বাচনী কৌশলে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরী করবে ভোটারদের মাঝে।
আপনার মতামত লিখুন :