News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘তৈমূরের নির্বাচনে টাকা বিলি করেন টিপু’


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১০:১৫ পিএম ‘তৈমূরের নির্বাচনে টাকা বিলি করেন টিপু’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেছেন, সম্প্রতি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা লিখে লিখি। আমার সেই লিখনি দেখে অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করছেন। অনেকে বলে এটিএম কামাল বিএনপির দুঃসময়ে দল ছেড়ে বিএনএফে চলে গেছে, কেউ কেউ বলে এলডিপিতে চলে গেছে, আবার কেউবা বিকল্প ধারায় চলে যাওয়ার কথা বলে। মূলত নারায়ণগঞ্জ থেকে বিএনএফে কারা গিয়েছিল তা পত্রপত্রিকা নিউজ ছেপেছে। আর আমি তো বিএনএফের চিন্তাও করিনি। বিএনএফটা হয়েছিল ওয়ান ইলেভেনের পরে। আর ওয়ান ইলেভেনেটা ছিল বিএনপির জন্য, জিয়া পরিবার আর গণতন্ত্রের জন্য চরম দুঃসময়। সেসময় আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ যারা কারাগারে ছিলেন তাদের সকলের জন্য আমরণ অনশন করেছিলাম।

তিনি বলেন, বিকল্প ধারার যে প্রশ্নটা উঠেছে এটা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকেও অনেকে গিয়ে বলেছে। যখন নারায়ণগঞ্জের বিএনপি কমিটি গঠন হয় তখন বেগম জিয়া অনেকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেসময় তাকে অনেকে বলেছিল যে এটিএম কামাল তো বিকল্প ধারায় চলে গিয়েছিল। তখন ম্যাডাম বলেছে ওয়ান ইলেভেনে থেকে আমি সবসময় এটিএম কামালকে মাঠে দেখেছি। এটিএম কামাল কি ওয়ান ইলেভেনের আগে গিয়েছিল? কখন গিয়েছিল? যখন ম্যাডাম এমন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ওই সময় অভিযোগকারীরা ম্যাডামের কাছে বলেছে ২০০২ সালে গিয়েছিল। তখনই ম্যাডাম বলে উঠলেন ২০০২ সালে তো বিএনপি ক্ষমতায়, তাহলে কামাল ওইসময় কেনো বিএনপি ছেড়ে গেলো? কারণটা কি?

কামাল বলেন, মূলত সত্যি কথা হলো ২০০২-২০০৩ সালে আমি বি-চৌধুরীর সাথে বিকল্প ধারায় গিয়েছিলাম। একপর্যায়ে কর্নেল অলি এবং বি-চৌধুরীর মিলে বিকল্প ধারাকে এলডিপিতে পরিণত করে এবং তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে। তারা যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে তখন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি জাতীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম কর্নেল অলি সাহেব ও বি-চৌধুরী সাহেব জাতির সঙ্গে বেইমানী করেছেন। কারণ দলটি গঠনের আগে তারা বলেছিল একটা বিকল্প, ব্যতিক্রমধর্মী, মানুষের রাজনীতি, ভালো ও সুস্থ দ্বারার রাজনীতি সৃষ্টি করবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সুস্থতার রাজনীতি বুঝেনা এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার জন্যে আমরা তাদের সঙ্গে দল গঠন করিনি। ঠিক ওইসময় থেকে আমি নিস্ক্রিয় হয়ে যাই। আমার আর কখনো রাজনীতিতে ফিরে আসার ইচ্ছেও ছিলনা। পরবর্তীতে যখন ওয়ান ইলেভেন ঘটে তখন জান্নাতুল ফেরদৌস, অধ্যাপক মনিরুলসহ বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দ আমার বাসায় এসে আমাকে বলেন যে এটিএম কামাল আপনি একজন শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক আমাদের প্রত্যেকের জানা। আপনি হয়তো কোন কারণে কিংবা দুঃখে বা অভিমানে চলে গিয়েছিলেন। তবে আপনি যেহেতু সেখানে আর এখন নেই তাই দলের এই দুঃসময়ে আপনাকে দলের (বিএনপি) হয়ে কাজ করতে হবে। এই থেকেই ঠিক ওয়ান ইলেভেনের সময় হতে আমি আবার বিএনপির জন্য কাজ শুরু করি।

এটিএম কামাল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত ও সদস্য সচিব টিপু দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করেনি? আমরা যখন কমিটিতে ছিলাম তখন তারা তো পাল্টা কমিটি গঠন করেছিল। এটা শৃঙ্খলা ভঙ্গনা? মূলত বিএনপির মধ্যে সবসময় দুইটা গ্রুপ থাকে। একটা হচ্ছে মূলধারার বিএনপি এবং আরেকটা হলো বিএনপির মূলদ্বারায় যারা নেতৃত্বে থাকে তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি, কর্মকাÐকে প্রতিহত করা কিংবা বাধা বাধাগ্রস্ত করার গ্রুপ। নারায়ণগঞ্জে যখন জেলা এবং মহানগরের সম্মেলন হয় তখন কারা বাধা দিয়েছিল? কারা সম্মেলনের তোরণ ভেঙেছিল? কারা প্রত্যেকটা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছিল? কমিটি থাকা সত্তে¡ও কারা প্রত্যেকটা জায়গায় পাল্টা কমিটি করেছিল? উপ কমিটি গঠন করে? কারা দলের নামে মামলা করেছিল? এগুলো সাখাওয়াত আর টিপুর নেতৃত্বেই হয়েছে। এখন দেখছি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রশ্ন আসে, আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলছি সাখাওয়াত-টিপুরা কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেনি?

ওয়ান ইলেভেনের পরে যখন জেলা কমিটির সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হলো তখন কেন্দ্র থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন টিপু-সাখাওয়াত সেই সম্মেলনকে বানচাল করতে সম্মেলনস্থলে হামলা করেছিল, তোরণ ভেঙেছিল এবং মহানগর কমিটির সম্মেলনকালে তারা উল্টো পাল্টা কমিটি গঠন করলো। অথচ তারা কোন আন্দোলন সংগ্রাম করেনি। টিপু-সাখাওয়াতরা তখন প্যাড সর্বস্ব কমিটিগুলো গঠন করে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশের মূলধারার বিএনপির কমিটি ছিলাম। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমরা যখনই সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতাম ঠিক তখন তারা পাল্টা কমিটি গঠন করতো। এককথায় আমাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডে তারা ব্যাহত সৃষ্টি করেছে। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে সাখাওয়াতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলজার খান দলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। এসব বিষয়ের সকল তথ্য প্রমাণসহ আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছিলাম। এগুলো কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ না?

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমান থেকে তৈমূর আলম অর্থ নেওয়া আর সেই অর্থ নিজ হাতে বিলিয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, শামীম ওসমান থেকে তৈমূর আলম টাকা নিয়েছেন কিনা সেটা আমরা জানা নেই। আর আমি নিজ হাতে কোনো টাকা বিলিয়ে দিতে পারিনি। ওই সময় আমি তৈমুর ভাইয়ের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকায় আমার উপর প্রশাসনের অনেক বেশি চাপ ছিল। আমি বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। আমরা যখন টাকার বস্তা নিয়ে আমাদের বাসায় বসেছিলাম তখনই আমার বাড়িতে অভিযান হয়। আমি টাকাপয়সা ফেলে পালিয়ে যাই। সেসময় টিপু কোনোমতে টাকার বস্তা উদ্ধার করে নিয়ে যান। এবং পরবর্তীতে টিপুর হাতে টাকাপয়সা বিলি হয়। লেনদেন করেছে টিপু এটা সবার জানা। তবে আমি সামনে ছিলাম।

মডেল মাসুদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার বিষয়ে এটিএম কামাল বলেন, আমি কি একবারও বলেছিলাম যে মডেল মাসুদকে নমিনেশন দেওয়া হোক বা হবে? একসময় মাসুদ ১১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিল। মাসুদ বিএনপি করেছে এটাতো সত্যি। পরবর্তীতে সে ব্যবসায় জড়িত হয়ে দূরে সরে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুঃসময় মাসুদ আমাদের পাশে ছিল এটা বলবো না কেন? বিপদে সে আমাদের সাপোর্ট করেছে এটা তো সত্যি। এটা আমি অস্বীকার কিভাবে করি? একটা দলের নেতাকর্মী ছাড়াও ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ মানুষ সাপোর্ট করে। সেইভাবেই মাসুদ সাপোর্ট করেছে।

দল বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করলে আগামী নির্বাচনে আমি নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৫ আসনে নির্বাচন করবো। আমি দলের কাছে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছি এবং নিজের ভুলের ক্ষমতা চেয়েছি। আমার বিশ্বাস দল আমার ত্যাগ বিবেচনা করে আমাকে সুযোগ দিবে।

খোরশেদকে ত্যাগী নেতা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, খোরশেদ অনেক ত্যাগী নেতা, দলের হয়ে মাঠে থেকে তার অনেক ত্যাগ রয়েছে। তবে  তার কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। খোরশেদ যখন টিম খোরশেদ গঠন করেছে তখন সে দলের নামে করতে পারতো কিন্তু সে দলের নামে করেনি। এটা ঠিক হয়নি। এই টিম খোরশেদ করে কিন্তু সে দলের অনেকের আস্থাভাজন হয়েছে। আমরা সবাই কিন্তু দলকে কেন্দ্র করে, দল ছাড়া আমাদের কিচ্ছু নাই।

৪ অক্টোবর রাতে নিউজ নারায়ণগঞ্জের অনলাইন আলোচনায় কামাল এসব কথা বলেন।

Islam's Group