নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ডা. শাহিন মিয়া বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা’ কৃষক দলের কমিটিতে বিশৃঙ্খলা করছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন বিএনপির সহযোগী সংগঠনটির এ নেতা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় সংগঠনটির আহবায়ক শাহিন মিয়া ছাড়াও সদস্য সচিব আলম মিয়া, যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল আরমান, ফজলু মেম্বার, মনির মল্লিক, শাহাদাত হোসেন, ওবায়দুর রহমান, শাহ আল বেপারী, সেলিম হোসেন দিপু উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহিন বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২ সদস্যের জেলা কৃষক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ২৫ মার্চ এ কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়। সাংগঠনিক নীতিমালা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের যাচাই-বাছাই পর বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন সংগঠনটির আহবায়ক।
তিনি বলেন, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল হওয়ার কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা এখানে রয়েছে। এই সুযোগে কিছু সুযোগ-সন্ধানি ব্যক্তি দলে ঢুকে পড়ে আওয়ামী লীগের ‘মদদপুষ্ট’ হয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ‘অপশক্তি’র সঙ্গে আপস না করারও ঘোষণা দেন ডা. শাহিন। একইসাথে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “সঠিক রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে আসুন। রাজনৈতিক সুশৃঙ্খল প্রতিযোগিতায় আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। একটি সংগঠনে ভিন্ন ভিন্ন পদে প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দের মধ্যে সাংগঠনিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ফ্যাসিস্টদের মদদপুষ্ট হয়ে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে আমরা কৃষক দল শক্ত হাতে তা প্রতিহত করবো। এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের চেষ্টা করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
এর আগে গত সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষক দলের জেলা কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ উল্লেখ করে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। এই সময় জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো. সোহেল, সোনারগাঁ শাখার সদস্য সচিব বাবুল আহমেদ, ফতুল্লা থানার আহবায়ক আমির হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি মো. মোমেনসহ কৃষক দলের একাংশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, পরদিন পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে জেলা কৃষক দলের আহবায়ক শাহিন মিয়া বলেন, বিগত ১৭ বছর অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সার্জেন্ট মোমেন, আমির বেপারী ও বাবুল ‘স্বৈরাচারের দোসরের ভূমিকায়’ ছিলেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কোন চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের পদে থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, “রূপগঞ্জ থানা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তাকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে নজরুলের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের যোগসাজসে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মৌজার আবাদি জমিতে বালি ভরাট করে দখল করেছেন। নজরুল দোসরদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করেছিল। এভাবে বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচার সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এই নজরুল। সে হলো মৌসুমী পাখি। এখন আবার দলের সুদিন দেখে দলের আনুগত্য তৈরি করতে বিভিন্ন পলিসি এপ্ল্যাই করছে। আমরা তাদের মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং বিষয়টি হাইকমান্ডকে অবগত করা হয়েছে।”
আপনার মতামত লিখুন :