News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

আটকে আছে খানপুর হাসপাতালের বর্ধিতকরণের কাজ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১০:২৩ পিএম আটকে আছে খানপুর হাসপাতালের বর্ধিতকরণের কাজ

এখনো আটকে আছে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন কিছুদিনের মধ্যে আংশিক বুঝিয়ে দেয়া হবে। বাকিটা পরবর্তীতে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এদিকে হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকট। এর ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল গুলোতে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এতে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতালটির আশেপাশে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল বাদে আর কোনো সরকারি হাসপাতাল না থাকায় সাধারণ মানুষকে এই হাসপাতালের উপর ভরসা করতে হয়। একদিকে আটকে আছে হাসপাতাল বর্ধিতকরণের কাজ আরেকদিকে জনবল সংকট থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জবাসী সবসময় তাৎক্ষণিকভাবে সেবা পান না। এ কারণে চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ছুটতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের খানপুর এলাকায় অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ৫৯ পদের ৫২৬ জনের বিপরীতে ৩৫২জন কর্মরত রয়েছেন। সংকট রয়েছে ১৭৪ জনের। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে নেই কোনো সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট। একই সঙ্গে নার্স, ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে জনবল সংকট রয়েছে। আর নতুন ভবন নির্মাণের ২ বছরের প্রকল্প ৫ বছরেও শেষ হয়নি। প্রকল্পটি নির্মাণের শুরু থেকেই ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। সেই সাথে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, বিগত সরকারের সময়ে তৎকালিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের প্রচেষ্টায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালটিকে ৫০০শয্যায় উন্নীত করনের আশ্বাস দেন। সেই সাথে ২০১৭ সালের ২১ মার্চ একনেকের বৈঠকে এ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুন মাসে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করণের লক্ষ্যে নতুন ১৫ তলা ভবনের প্রথমধাপে ৭তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। পুরো প্রকল্পের জন্য মোট ১৩০ কোটি টাকার বরাদ্দের অনুমোদন দেয় সরকার। যেখানে ৭ তলা ভবন নির্মাণে অনুমোদিত প্রকল্প মূল্য ৭০ কোটি টাকা। এদিকে শুরুতেই প্রকল্পটির দরপত্র আহবানের মাধ্যমে জিকে বিল্ডার্সকে ঠিকাদারি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের ২৪ মাসের মধ্যে শেষ করতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে ছিলো। নির্মাণ শুরুর ১৯ মাসে প্রকল্পটির মাত্র ২০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়। পরবর্তী ১ বছরে মাত্র ৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের মোট ২৫ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এরমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের মালিক জিকে শামীম ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হলে প্রকল্পে থেকে তার কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢালি কন্সট্রাকশনের আওতায় প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর দুইবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও মহামারি করোনা এবং বরাদ্দ সংকটের কারনে নির্দিষ্ট সময় ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। সব শেষে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এ নিদিষ্ট তারিখের মধ্যেই ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আরেক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে, গত ২৬ এপ্রিল গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ-কর্মসূচির আওতায় খানপুর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত), রেসিডেন্ট সার্জন (আরএস), কনসালটেন্টসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

এদিন জেলা প্রশাসক ডাক্তারদের হাসপাতালের নতুন ভবন পরিদর্শন করে দ্রুত সেখানে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। নার্সদের জন্য নির্মিত নতুন ভবনের কাজ অসমাপ্ত থাকায় সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মাদকের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়াও ডাক্তারদের জন্য নির্মিত আবাসিক এলাকা এবং আনসার সদস্যদের জন্য আবাসন সুবিধার প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করেন এবং আনসারদের জন্য একটি আবাসন নির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এরপর তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, সেবা কক্ষ ও চত্ত্বর ঘুরে সার্বিক পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পর্যালোচনা করেন এবং ওয়ার্ডসমূহকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেবার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করে তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের জন্য একটি মানবিক, উন্নত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই প্রশাসনের অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি হাসপাতালকে একটি সুগঠিত, আধুনিক ও যুগোপযোগী রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল কাইউম জানান, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল ২০০ শয্যা থেকে ৩০০ শয্যায় রুপান্তরিত হলেও অর্গোনোগ্রাম সেই আগেরটায় রয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার আরো নতুন করে ৫০০ শয্যার ভবন নির্মিত হচ্ছে। এ অবস্থায় অর্গোনোগ্রাম পরিবর্তন করে লোকবল নিয়োগ না দিলে আশানুরূপ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা ডিসি স্যারকে জানিয়েছি যেন উনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলে জনবলের এই সমস্যা স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেন। ডিসি স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন উনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

জনবল সংকটের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মুশিউর রহমান বলেন, কনসালটেন্ট ছাড়া খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সেবা দিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জনবল সংকট দূর হলে রোগীরা জেলা পর্যায়েই সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পাবে। আমরা এ বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট সংকট দূর হয়ে যাবে। আর অন্যান্য পদে জনবল সংকট দূর করার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Islam's Group