গত ২৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নারায়ণগঞ্জ শহরের মধ্যে মাঝারি শোডাউন দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ২ নম্বর রেলগেইটস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলেন তারা। তবে এই সমাবেশ থেকে নারায়ণগঞ্জে বিগত সময়ে ওসমান পরিবার এবং আওয়ামী লীগের দোসরদের ইঙ্গিত করে প্রদান করা বার্তা এখন আলোচ্য ইস্যু।
গত শনিবার বিকেলে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব এবং শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জে নানা ভাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসরদের বিভিন্ন স্থানে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্র জনতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধরিয়ে দিলে দুই চারদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসছে। যারা ওসমান পরিবারের হয়ে বক্তব্যবাজি, ব্যবসায়িক রাজনীতি করেছেন, ওসমান পরিবারের আশ্রয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন এবং জুলাই আন্দোলনের সময় যারা ফ্যাসিস্টদের উস্কানি দিয়েছেন ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য। তারা এখন অনেক বড় বিপ্লবী হয়ে গেছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আবার ওসমান পরিবারকে পুনর্বাসিত করছেন। আমরা এমন নারায়ণগঞ্জ দেখতে চাইনা।
তিনি আরও বলেন, যারা বিগত ১৬ বছর ওসমান পরিবারের ল্যাসপেন্সার হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক মহল, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, সাংবাদিক মহল, সুশীল সমাজের নামে বিভিন্ন মহলে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের ব্যাপারে আমরা অবস্থান দেখতে চাই। সেই সমস্ত দোসরদের প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার করার আহবান জানাই। আমরা দেখেছি জুলাই মাসে কার কি অবদান। আমরা দেখেছি জুলাই আগস্ট মাসে খুনী হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলেছিলেন। তারা এখন নারায়ণগঞ্জে বড় বড় বিপ্লবী সাজেন। তারাই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন।
তার এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক অঙ্গণে। প্রশ্ন উঠে কাকে বা কাদের ইঙ্গিতে করে এই মন্তব্য করেছেন এনসিপি নেতা আল আমিন। বক্তব্যের বার্তা এবং সময়কাল বিবেচনায় অনেকেই ধরে নিয়েছেন বিকেএমইএ এবং চেম্বারে থাকা সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করেই মন্তব্য ছুড়েছেন এনসিপি নেতা।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান কমিটিতে বেশ কয়েকজন পরিচালক রয়েছেন যারা সেলিম ওসমানের সিলেকশন পর্ষদে ছিলেন। সেই সাথে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন তারা। এদের মধ্যে রয়েছেন মোর্শেদ সারওয়ার সোহেল, সোহেল আক্তার, খন্দকার সাইফুল ইসলাম। এছাড়া বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে নিয়েও রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
আল আমিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘জুলাই আগস্ট মাসে খুনী হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলেছিলেন। তারা এখন নারায়ণগঞ্জে বড় বড় বিপ্লবী সাজেন।’ তার এই বক্তব্যের সাথে মিলে যায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ নেতা মোহাম্মদ হাতেমের সেসময়কার কথাবার্তার সাথে। সেসময় হাতেম শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘ যে তাÐব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। ব্যবসায়ী সমাজ আপনার পাশে ছিল, থাকবে। কারখানাগুলো যদি আমরা চালু রাখতে পারি, তাহলে শ্রমিকরা ভেতরে সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকবে। বাইরে থাকলে তাদের অন্যরা ব্যবহার করতে পারে, তাদের ভেতরে থাকাটাই নিরাপদ।
এর আগেও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিলো জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদুজ্জামানকে। এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও মোহাম্মদ হাতেমকে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেখা যাওয়ায় এর সমালোচনা করেছিলেন। সবশেষ সেই তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছেন এনসিপি নেতা আব্দুল্লাহ আল আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :