সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খানের বলয়ে এবার দেখা গেছে মহানগর বিএনপি নেতা আবদুর সবুর খান সেন্টুকে। অথচ এক সময়ে তিনি তৈমূর আলম খন্দকারের সাথে রাজনীতি করার সময়ে জাকির খানের বিচার চাইতেন। সাব্বির হত্যার বিচার দাবীতে প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারী যে সমাবেশ হতো সেখানে তিনি হাজির হতেন।
ওয়ান এলেভেনের সরকার আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে বিএনপির ভরাডুরি ঘটে। এরপর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শহর বিএনপি সম্মেলনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও এটিএম কামাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এই কমিটি ৮ বছর বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও বিলুপ্ত শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৮ সালের শেষ সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্রবীন নেতা আব্দুস সবুর খান সেন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট হওয়ার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়। এর ফলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে কপাল খুলে যায় আব্দুস সবুর খান সেন্টুর। আট মাসের মাথায় দায়িত্ব পালনকালে মহানগর বিএনপি আহবায়ক কমিটির ঘোষনা করা হয়। বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের মহানগর কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এই ঘোষণার পরই ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদনের ৬ দিনের মাথায় ৪ যুগ্ম-আহবায়কসহ ১৫ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার হলেন: মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, আবুল কাউসার আশা, সদস্য অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুল ইসলাম মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, ফারুক হোসেন, হাজী ফারুক হোসেন, হান্নান সরকার, আওলাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু।
আব্দুস সবুর খান সেন্টু ওই সময়ে বলেন, নতুন আহবায়ক কমিটির ১৫ জন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রকেও জানানো হয়েছে। মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না এই ১৫ নেতা।
১৫ সদস্যের মধ্যে বিদ্রোহী অন্যতম নেতা যুগ্ম-আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল জানান, প্রস্তাবিত আহবায়ক কমিটির বিষয়ে তারা জানতেন না। এছাড়া কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। অনুমোদনের আগে প্রস্তাবিত যে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে কমিটির অনেকেই জানতেন না। তাছাড়া কমিটিতে অযোগ্য অনেককে জায়গা দেওয়া হয়েছে। যারা আন্দোলন সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন, তাদের অনেককেই বঞ্চিত করা হয়েছে। এই কারণে কমিটির ১৫ জন নেতা গতকাল শনিবার রাতে এক সভায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি কেন্দ্রেও জানানো হয়েছে।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে আতাউর রহমান মুকুলকে বিদ্রোহীদের প্রধান করে মুখপাত্র হয়েছিলেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। কর্মী বিহীন এই প্রবীন নেতা পরামর্শে বিদ্রোহীদের অগ্রসর ছিলো কচ্ছপ দৌড়ে। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে আতাউর রহমান মুকুল সহ ছয়জনকে বহিস্কার করা হয়। এতে বিদ্রোহীদের কোমড় ভেঙ্গে যাওয়ায় মুকলের পাশে সহসা দেখা যায়নি সেন্টু সহ পদত্যাগকারীদের।
৫ আগষ্টের পর মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক সুবাদে নগরের একাংশভাবে ক্ষমতাসীন হয়ে উঠেন আব্দুর সবুর খান সেন্টু। দেওভোগে বিএনপি রাজনৈতিক নেতা জাকির খান বলয়ে গড়ে উঠে তার রাজ্যত্ব। এই সুবাদে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচনে জাকির খান ও বদু বলয়ে প্যানেলর কর্তা বনে যান। নির্বাচনে পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর হোসিয়ারি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন এক বছরের জন্য। বর্তমানে আব্দুর সবুর খান সেন্টু রাজনীতি মাঠে বহিস্কৃত মুকুলকে ছেড়ে জাকির খানের নিকটস্থ হয়ে উঠেছে। মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক হওয়ার কারণে জাকির খানের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে মুকুলের আস্থাভাজন সেন্টু।
বিএনপির একাধিক নেতার সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা (বহিস্কৃত) তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে জাকির খানের বিচার দাবি করে বক্তব্যে দিয়েছিলেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। তৈমূরের আস্থাভাজন হিসেবে প্রবীন এই নেতা এক সময়ে জেলা ও মহানগর বিএনপিকে নড়তে চড়তে দেখা যেত।
১৩ এপ্রিল জাকির খান মুক্তি পাবার কয়েকদিন পর বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচিতরা ফুলের শুভেচ্ছা জানান সভাপতি বদু ও সেন্টু সহ পরিচালকরা। ওই সময় গণমাধ্যমে একটি বক্তব্যে সেন্টু বলেন, জাকির খান আগামীতে মহানগর বিএনপি দায়িত্ব নিবে। তার প্রশংসা জর্জরিত বক্তব্যে নেটিজনে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেকে লিখেছেন, বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির একাধিকবার সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে সর্বনাশের পর জাকির খানকে ঘায়েলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেন্টু। রাজকীয় টুপি নিয়ে জাকির খানকে আগামী কোন টুপি পড়িয়ে দিবেন সেন্টু এমন আলোচনা চারিদিকে।
আপনার মতামত লিখুন :