নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনকে বলা হয় নারায়ণগঞ্জ নিয়ন্ত্রণের আসন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেই প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনে জয়লাভ করেন, তিনিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন জেলাজুড়ে। কারণ তার এই আসনের মধ্যেই অবস্থিত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আদালত এবং সিটি করপোরেশনের একাংশ। ঢাকা লাগেয়া এই অঞ্চলটি ভৌগলিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই অঞ্চলে বসবাসরত বাসিন্দাদের সংখ্যা বা ভোটার সংখ্যা জেলার অন্য সকল উপজেলার চাইতে বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে এবার নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ কয়েকটি দলের প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপি বা ধানের শীষের মনোনয়ন পেতেই মুখিয়ে আছেন অনেকে। তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি থেকে শুরু করে বিগত সময়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা সাবেক প্রার্থীরা। নিজেদের প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারে ছবি ছাপিয়ে নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও জমিয়ত উলামায়েকে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, সাবেক প্রার্থী শাহ আলম, মনির হোসেন কাশেমী, জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ, জামায়াতের মহানগরের আমীর আব্দুল জাব্বার এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন।
সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বেশ সক্রিয় ভাবেই নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। জেলা বিএনপির সভাপতি পদ হারালেও মনোবল হারাননি। তার নেতাকর্মীরা ফতুল্লায় কোনঠাসা হয়ে পড়লেও তিনি চেষ্টা করছেন নিজের সক্রিয়তা ধরে রাখতে। এমনকি দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন এমন গুঞ্জনও উঠেছে তার অনুসারীদের দ্বারা। যা নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্টভাবে বার্তা দেয় যেই এই আসনে নির্বাচনের জন্য বেশ ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
একই ভাবে আলোচনায় আছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ব্যবসায়ী শাহ আলম। বেশ কিছুদিন বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ৫ আগস্টের পর সরব হচ্ছেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রন জানিয়ে তৈরী করেন এক মিলনমেলার। ঘনিষ্টজনদের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন নির্বাচন করার আগ্রহের কথা। সেই সাথে বিগত সময়ে আড়ালে থেকে কিভাবে জেলা বিএনপির কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারন করতেন তাও জানিয়েছেন শাহ আলম।
শাহ আলমের পরেই আলোচনায় আছেন জমিয়তে উলামায়ের কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাশেমী। ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও প্রত্যাশা বিএনপির সাথে জোট করে বিএনপি থেকে মনোনয়ন লাভ করবেন। পুরোনো নির্বাচনী অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান এবার।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির চাইতে সুশৃঙ্খল ও নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতের মহানগরের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার। নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে মাঠে নেমেছেন রোজার আগ থেকেই। পুরো নির্বাচনী অঞ্চলে পোস্টারিং করে নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবেও নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনে আব্দুল জব্বার প্রার্থী হচ্ছেন এমন বার্তা এসেছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের ৪৬ টি আসনে প্রার্থী এক প্রকার চ‚ড়ান্ত করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসন। এখানে প্রার্থীতা করতে কাজ করে যাচ্ছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন। গত ৪ মাস ধরে নিয়মিত নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। পুরো রোজার প্রায় প্রতিটি দিন ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে নিজ এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে নির্বাচন করতেও বদ্ধ পরিকর রয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :