নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুট এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে অভিযান চালিয়ে কয়েক ট্রাক ব্যানার ফেস্টুন সারানো হয়েছে যা কিনা চাষাঢ়া থেকে শিবু জালকুড়ি হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগের ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রুটের সৌন্দর্য অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে সাধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে চলাচলের রাস্তা ফুটপাত অবৈধ হকারদের দখলে রেখে গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সকলে সাধুবাদ জানালেও গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ গড়ার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের নেওয়া দৃশ্যমান উদ্যোগগুলোকে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের সুশিল সমাজের নাগরিক সহ সাংবাদিক এবং বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে বাস্তবায়নে সকলেই সহযোগিতার আশ্বাসের পাশাপাশি বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রকৃতভাবে গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলার পথ সুগম হবে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল সময়ের নারায়ণগঞ্জকে বলেন, কিছু কাজ আছে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করা, যেটাকে ইংরেজিতে বললে আইওয়াশ বলা চলে। এরকম কাজ করে একটা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় বটে কিন্তু একটি শহরের মৌলিক পরিবর্তন করা যায়না। নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট এবং হকার ইস্যু। এই ইস্যুর সমাধান না করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে না। ফলে আমরা যদি জেলা প্রশাসক সাহেবের ওই পলিথিন পরিষ্কার করে কোনো রকমে পার পেয়ে যাবেন শহর থেকে এটা নারায়ণগঞ্জবাসী মানবে না। আমরা উনার কাছে প্রত্যাশা রাখি, উনি জেলা প্রশাসনের প্রধান ফলে অবশ্যই কারা হকার বসাচ্ছে, কারা যানজট সৃষ্টি করছে, কেন এতো অটো রিকশা নারায়ণগঞ্জ শহরে আসলো এটাকে উনার দেখভাল করা উচিত। নারায়ণগঞ্জবাসীর নাগরিক জীবনযাপনের মৌলিক পরির্তনে উনার একটি মূখ্য ভূমিকা থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, জেলা প্রশাসনের গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি পূর্ণতা দিতে হলে অবশ্যই এই কর্মসূচির মধ্যে নগরীর ফুটপাত থেকে অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ নগরীর প্রধান সড়ককে অবৈধ হকারের দখলে রেখে ক্লিন সিটি গড়া সম্ভাবনা। এই হকাররা ফুটপাত দখল করে সাধারণ মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি তারা দিনভর দোকানপাট করে পুরো শহরকে নোংরা করে রাতে ফিরে যাচ্ছে। তাদের পরিত্যক্ত পলিথিন ড্রেনের মুখে আটকে গিয়ে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে গোল টেবিল বৈঠক করে অনেক চেষ্টা করেছি ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা কিন্তু হচ্ছেনা। জেলা প্রশাসককে গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় ফুটপাত দখল মুক্ত করার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। নয়তো গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কোনোদিনই সম্ভব হবেনা।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেনম, জেলা প্রশাসকের নেওয়া গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা এই কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন আমরা তার পুরোটাই করবো। আমরা চাই এই কর্মসূচিটা পুরোপুরি ভাবে নারায়ণগঞ্জে বাস্তবায়িত হোক। কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে একদিনের সব বাস্তবায়ন করা সম্ভবনা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ করতে হলে যে প্রতিবন্ধকতা গুলো রয়েছে সেগুলো আস্তে আস্তে সমাধান করতে হবে। মীরজুমলা সড়ক চালু হয়েছে, রাস্তা ড্রেনের কাজ চলছে সেগুলো শেষ হলে অনেকটা উন্নতি হবে। আর ফুটপাতে হকার যে রয়েছে তাদের নিয়ে একটা চিন্তাভাবনা চলছে। তারাও নারায়ণগঞ্জের মানুষ। তাদের পুনর্বাসনের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। রেলওয়ে বা সরকারি জায়গাতে তাদের পুনর্বাসন করা যায় কিনা সেই চেষ্টা চলছে। আশা করি গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি বাস্তবায়ন নারায়ণগঞ্জের সকলেই চায় আমরাও চাই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা জেলা প্রশাসনকে করবো।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, আমি মনে করি ডিসি সাহেবের উদ্যোগটি অত্যন্ত ভাল এবং ইতিবাচক। কিন্তু এই উদ্যোগটা নারায়ণগঞ্জকে গ্রিণ এবং ক্লিন করার জন্য যথেষ্ট নয়। কেবল মাত্র ব্যানার ফ্যাস্টুন অপসারণ এবং কিছু গাছ লাগানোকে আমি যথেষ্ট মনে করিনা। আমি মনে করি এটা ভাল সূচনা না। এই নারায়ণগঞ্জে আমাদের একটাই সড়ক আছে বিবি রোড। যেটাকে আমরা বলি নারায়ণগঞ্জের পাইপলাইন। অর্থাৎ এই পাইপলাইনটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পুরো নারায়ণগঞ্জ শহর স্থবির হয়ে যায়। ফলে এটা সাথে দুটো বিষয়কে আমি খুব প্রাষঙ্গিক মনে করি। একটি হচ্ছে শহরের ভেতরে যান চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা সীমিত করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মানুষের চলাচল করার জন্য ফুটপাত গুলোকে আকর্ষনীয় করা। যেমন ফুটপাতে কিছু দূর পর পর ডাস্টবিন যুক্ত করা। ক্লিন নারায়ণগঞ্জের সাথে কিন্তু ডাস্টবিন যুক্ত। শহরের কোথাও দেখবেন না ডাস্টবিন আছে। ফলে কিছু দূর পর পর একটি করে ডাস্টবিন থাকে সেটি শহরবাসীর মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেটার সাথে যদি পরিস্কার বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারে সেটাও শহরের জন্য নতুন সংযোজন হবে। মার্কেট গুলোর দুইপাশ ধরে যদি কিছু গাছপালা, টব বসানো যায়, যদি সম্ভব হয় কিছু দূর দূর পর ফুটপাতে কিছু বেঞ্চ বসানো হয় তাহলেই শহরের চেহারা বদলাবে। ফুটপাতকে মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কোনো ভাবেই ক্লিন নারায়ণগঞ্জ গড়া সম্ভব না। গ্রিণ আমরা তখনই বলবো যখন শহরে গাছপালা সবুজের সমরোহ থাকবে। সেই গাছপালার সাথে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, ময়লা ফেলার ডাস্টবিন, বসার জন্য বেঞ্চ থাকলে নাগরিকেরাও দায়িত্বশীল আচরণ করবে। জেলা প্রশাসনের গ্রিণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ এর মধ্যে এসব বিষয় গুলো অবশ্যই যুক্ত করা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :