News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা নীরব ভূমিকায়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা নীরব ভূমিকায়

গত ৫ আগস্টের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের দুই অনুসারী বিএনপিতে স্থায়ী হওয়ার জন্য ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে তারা এখন গোপনে বিএনপিতে প্রবেশ চেষ্টা করছেন। এর ফলে বর্তমানে তারা নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন, নাসিক ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইসরাফিল প্রধান এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। দুইজনই বিএনপিতে কামব্যাক করতে চাওয়ায় ক্ষুদ্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষ্য, দলের দীর্ঘ দু:সময় যারা দলের সঙ্গে ছিল না তারা এখন কি করে বিএনপির রাজনীতি করতে সাহস দেখায়।

বিএনপির তৃণমূল ও ত্যাগী যেসব নেতাকর্মী বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে কষ্ট শিকার করে আসছে তাদের এখন মূল্যায়ন করার যথাযথ সময় হয়েছে। এখানে ইসরাফিল প্রধান কিংবা সেন্টুর বিএনপির রাজনীতি করার কোনো অধিকারই নেই। তারা অনেক আগেই বিএনপির রাজনীতি করার নৈতিক সমর্থন হারিয়েছেন।

সম্প্রতি জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বাসায় গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইসরাফিল প্রধান এবং গত ৫ জানুয়ারি বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিকট আবেদন করেছেন মনিরুল আলম সেন্টু। এদের মধ্যে ইসরাফিল প্রধান শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আর মনিরুল আলম সেন্টু শামীম ওসমানের সমর্থনে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। তারা কোনোভাবেই বিএনপিতে যেনো ফিরতে না পারেন সেক্ষেত্রে সতর্ক রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও তিনি নিয়মিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালন করতেন। এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই তাকে ঘিরে। এর ফলে বিএনপির চলমান কমিটিতে তার নাম থাকার পর যেকোনো মামলা থেকে তিনি বারংবার বেঁচে যেতেন। গ্রেফতার শঙ্কাও তার মধ্যে কাজ করতো না। এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অনেক ক্ষোভ ছিল। এর আগে ইসরাফিল প্রধানের এই দুমুখী আচরণ নিয়ে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তবে ইসরাফিল প্রধানের দাবি ছিল, তিনি এখন কোনো দলেরই সঙ্গে যুক্ত নন। বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিতে কিভাবে তার নাম এসেছে তা তিনি নিজেও জানেন না বলে দাবি তার। অন্যদিকে বিএনপির দাবি ছিল, কোনো ব্যক্তি না চাইলে কাউকে জোর করে কমিটিতে পদ দেওয়া যায় না। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি না হওয়ায় ইসরাফিল প্রধান কোনো পদে ছিলেন না। তাই তিনি যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে ছিলেন তা বলা যায় না। আবার আওয়ামী লীগের আরেক নেতা দাবি করেছিলেন, সুবিধাভোগী হওয়ার কারণে ইসরাফিল প্রধান এমনটা করেন। তার আগে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে সালাম করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ইসরাফিল প্রধান। তিনি তখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তখন তিনি বিএনপির সমর্থনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়া বিএনপির বেশ কয়েকটি নাশকতার মামলায় আসামি ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগে যোগদান করার পূর্বে কারাভোগও করেছেন একাধিকবার। এদিকে স্কুলের ওই অনুষ্ঠান শুরুর আগে শামীম ওসমানের হাতে ফুল দেন ইসরাফিল প্রধান। পরে শামীম ওসমান ফুল গ্রহণ করলে ইসরাফিল প্রধান শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান তোলেন।

আর একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আওয়ামী লীগের শাসনামলে শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন তিনি। দুই নৌকায় পা দিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তিনি। গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই তার চরিত্র বদলানো শুরু করেন।

জানা যায়, মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার থেকে বাঁচতে তিনি এই পথ অবলম্বন করছেন। তবে গ্রেফতার না হলেও মামলা থেকে রেহাই পান নি তিনি। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সর্বপ্রথম মাছ ব্যবসায়ী মিলন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় ১৯ নম্বর আসামি করা হয় তাকে। এর আগে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ থেকে বারবার বলা হয়েছে যদি কোনো বিএনপির নেতা কিংবা কোনো কর্মী অবৈধ লাভের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। বিশেষ করে চেয়ারম্যান সেন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হচ্ছে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু। ২০১৫ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জনগণের নেতা আখ্যা দিয়ে আগামীতে তাকে বিজয়ী করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি বলেন, শামীম ওসমান যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে করে তিনি রীতিমতো মানুষের মনে ‘পীর’ হয়ে উঠেছেন। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ নিলেও মনিরুল আলম সেন্টুর কারণে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিএনপির কেউ প্রার্থী হতে পারেনি। শামীম ওসমানের পরামর্শে চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। জনশ্রæতি রয়েছে, ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের অনুগামীরা নৌকা ডুবিয়ে দেয়। অর্থাৎ ওই ইউপি নির্বাচনে কুতুবপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল আলম সেন্টুকে। এরপরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও বিএনপির রাজনীতিতে আর সক্রিয় ছিলেন না মনিরুল আলম সেন্টু। বরং আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নেন মনিরুল আলম সেন্টু। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতেই তাকে সক্রিয় দেখা গেছে।

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর ৩১ জুলাই কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী ল‌ী‌গের জরুরি সভায় চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, কোটা ইস্যুতে আন্দোলনে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদে ধ্বংসলীলা চালা‌নো হ‌য়ে‌ছে এ ধর‌নের নৈরাজ‌্য একা‌ত্তর‌কে হার মা‌নি‌য়ে‌ছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে। কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমি দেশের বাহিরে ছিলাম, এসেই মর্মাহত হলাম। এতো আন্দোলন হলো, এরশাদবিরোধী আন্দোলন হলো। এতো ভয়াবহতা কখনই হয় নাই। আমি দলের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলাম। তারা আমাকে বললেন যেন প্রতিহত করার জন্য ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে সাইনবোর্ড এলাকা যেন ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। তারপরেও আমি আজ এই মিটিংয়ে বলতে চাই। আন্দোলন আছে থাকবেই। প্রত্যেক দলের মধ্যেও আভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে থাকবে। কিন্তু এখন কাদা ছোড়াছুড়ি করা যাবে না। যে অবস্থা চলছে। প্রধানমন্ত্রী দেশ রক্ষায় কাজ করছে। আমাদের এখন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নামতে হবে। সে যদি আমার ভাই হোক, বাপ হোক। তারপরেও কোনো ছাড় নাই। তিনি আরও বলেন, কোনো সন্ত্রাসী জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করবে, তাকে ছাড় দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। তাকে ছাড় দিলে আগামীতে আমরাও থাকতে পারবো না। তাই সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এমপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় কর্মসূচি দিবেন। আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বশক্তি দিয়ে থাকবো। প্রথম যুদ্ধটা আমাদের সাথেই হোক। এরপর অবস্থান অনুযায়ী মাঠে থাকবো। সকলে সহযোগিতা করবেন। এখন থেকে কেউ হইচই করে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা সেইভাবে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মাঠে থাকবো। এসময় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু যুক্ত করে বক্তব্য সমাপ্তি করেন তিনি।

Islam's Group