News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বিএনপিকে টক্করের প্রস্তুতি মাকসুদ চেয়ারম্যানের


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১১:২৬ পিএম বিএনপিকে টক্করের প্রস্তুতি মাকসুদ চেয়ারম্যানের

আগামী বছর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ পতনের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত সময়ের দেয়ার দাবিতে অনড় রয়েছে বিএনপি। আগামী বছর মার্চের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন জামায়াতে ইসলামী। সব কিছু মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাচঁটি আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষনা দিয়েছেন। অন্যদিকে এখনো মনোয়ন যুদ্ধে কৌশলী ভূমিকায় নির্বাচনী এলাকায় চুষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি প্রত্যাশিত প্রার্থীরা। পাচঁটি আসনে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় ভোট যুদ্ধে আবারো ধ্বস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কমিটিতে ত্রি-মুখি ও মহানগর বিএনপিতে চতুরমুখি গ্রুপে নেতা-কর্মীরা বিভাজনে রয়েছেন। এর পাশাপাশি পাচঁটি আসনে জনগণের কাতারে এখনো ছুইতে পারেনি বিএনপি প্রার্থী ও পদপদবী থাকা নেতারা।

এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার সাটিঁয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি, বন্দর উপজেলা ও মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। মহাজোটের সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মুছাপুর ইউনিয়নে বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এক সময় অবাধ্য হওয়ার কারণে মাকসুদ হোসেন রাজাকারের সন্তান হিসেবে আখ্যা দেন সেলিম ওসমান। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে ২০২২ সালে ৩ জানুয়ারি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি রাতে মোহাম্মদ মাকসুদ হোসেনের নবনির্মিত প্রাসাদোপম বাড়ি উদ্বোধনীতে এক সভা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির তৎকালীন এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল। তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও। এ সভা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও নানা প্রশ্ন তুলছেন। এছাড়াও বন্দরের ইউএনও, ওসি, সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারম্যান মাকসুদের বাবা রফিকুল ইসলাম রফিক চিহ্নিত রাজাকার (প্রয়াত)। মুনতাসীর মামুনের লেখা 'শান্তি কমিটি ১৯৭১' বইয়ে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে রফিকুল ইসলাম (সে সময়ে বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান), তাঁর দাদা মাইনুদ্দিন, চাচা আব্দুস সামাদ, আব্দুল মালেক ও গোলাম মোস্তফার নাম রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন বইয়ে এই পরিবারের লোকজনের অপকর্মের বর্ণনা রয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা শেষ প্রান্তে যুবদলের মুছাপুর ইউনিয়নের সভাপতি হন। কিন্তু কয়েকদিন পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসলে এস এম আকরামের আস্থাভাজন হিসেবে দাড়িয়ে যান মাকসুদ।

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন মাকসুদ। এরপর নারায়ণগঞ্জ ও যাত্রাবাড়িতে ছাত্র-জনতা হতাহত একাধিক মামলা আসামি হন তিনি। গত ৫ মার্চ ডেভিল হার্ন্টের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের স্লানোৎসবে মুছাপুরে এমপি হিসেবে মাকসুদ হোসেনকে দেখতে চান বলে ফেস্টুন সাটানো হয়। এর কয়েক দিন তিনি জামিন লাভে নতুন করে আলোচনা উঠে এসেছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে সাবেক শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মহানগর জামায়াতে ইসলামী আব্দুর জব্বারকে। অপর দিকে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপি আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আবু জাফর ওরফে প্রাইম বাবুল, মাহমুদুল হাসান ও মাসুদুজ্জামান ওরফে মাসুদ। তাদের ছাড়াও আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও করোনাযোদ্ধা মাকছুদুল আলম খন্দকারের নাম।

অন্যদিকে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মত সদর ও বন্দর আসনে বিএনপিকে টক্কর দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন মাকসুদ হোসেন এমন বার্তা পাওয়া গেছে। বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক গোপনীয়দের সাথে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে শুভ। আগামী নির্বাচনে তাকে দলের প্রার্থী করার জন্য সকল কিছু করতে প্রস্তুত মাকসুদ। বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ পেয়েছেন ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ ১৪ হাজার ৮৩৮ ভোট ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল ১২ হাজার ৬২২ পান। বন্দর উপজেলার অংশে এমন ভোট ব্যাংকের পিছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানদের অবদান। বন্দর থানাও এমন ভোট ব্যাংক ইতোমধ্যে সাজিয়ে তুলেছেন বলে তার নিকটসূত্রে জানা গেছে। বন্দরের ভোটে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগকারী মাকসুদ এত ভোট পাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয়। ওই সময় তাকে আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য তার সমর্থক ও কর্মীরা প্রস্তাব দেন। এর কয়েক মাস পরই আওয়ামী লীগের পতনের কপাল খুলে যায় মাকসুদের। ওসমান পরিবার বিতাড়িত হওয়ার বন্দর একক ক্ষমতাধরে রূপ নেন তিনি। বন্দর বিএনপি বর্তমান পদধারী নেতারা মাকসুদ হোসেনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ছাত্র-জনতা একাধিক মামলা আসামী হয়েও বীরদর্পে থাকতে দেখা যায়। এলাকা সূত্রে জানা যায়, বিএনপি হেভিওয়েট নেতাদের সাথে সখ্যতা ও আনাগোনা ড্যাম কেয়ারে মাকুসদ হোসেন। তিনি আগামী দিনে বিএনপি বা নাগরিক পার্টির দলের মনোয়ন চাইবেন। বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন বাবার মতই একজন চতুর প্রকৃতির লোক। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে মুছাপুর ইউনিয়নে নিজের ও পরিবারের আধিপত্য বিস্তার করেছে। একজন কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অংশীদার প্রমানে কোন প্রকার কসুর রাখেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে মুছাপুর এলাকায় দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়েছেন মাকসুদ ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় মাথায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে থাকা মাকসুদ হোসেন মুছাপুরে ফিরে এসে শেখ হাসিনার পতনে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরন করেন। আর রাতে তার নির্দেশে তার সন্ত্রাসী ছেলে দলবল নিয়ে মুছাপুর ধামগড় সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টি অধিক বাড়িতে হামলা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। রাতারাতি ভোল পাল্টানো মাসকুদ হোসেন এরপর কাছে টানতে শুরু করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের। যে কিনা শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছাত্রের বাড়িতেও হামলা লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ ১৯ আগস্ট সকালে বন্দর উপজেলা পরিষদে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক-সহ সম্বনয়করা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার চালানো হয়। প্রকাশিত ওই সকল ছবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ফারহানা মানিক মুনা পাল্টা প্রশ্ন করেন এরা কারা? বন্দরে আলাদা করে কোন কমিটি করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জে একটাই সমন্বয়ক কমিটি।

Islam's Group