নারায়ণগঞ্জে প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, নারায়ণগঞ্জ শহরকে একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি উন্নত শহরে রূপান্তর করেছেন এই নারী মেয়র। ব্যক্তিগত জীবনে কঠোর পরিশ্রমী মেয়র আইভী একটি অন্ধকার শহরকে একটি আলো জলমলে শহরে রূপান্তর করেছেন। তাই তার ২১ বছরের ইতিহাস হবে এই জনপদের জন্য স্বর্ণযুগ। তাই আইভীর শাসনামল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে বলেই নারায়ণগঞ্জ শহরের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন। তবে গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতা হত্যাকারী আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান ও অবিচল মনোভাব সব অর্জনকে স্লান করে দিতে চলেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নাটকীয়তা শেষে তাকে গ্রেপ্তারের পর সর্বত্র নেতিবাচক আলোচনা ঘটে। কিন্তু গ্রেপ্তারের সময়ে আসামী হয়েও মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দেওয়া ও সেখানে আওয়ামী লীগের স্লোগান দিয়ে নিজেকে অবিচল রাখার প্রত্যয় করায় সর্বত্র বিতর্কের সম্মুখীন হয়।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ করার দাবীতে সর্বত্র চলছে আন্দোলন। ঢাকাতেও একের পর এক আন্দোলন হচ্ছে। সারাদেশে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
টানা তিনবারের মেয়র ও বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন আইভী। ভোটের ক্ষেত্রে প্রতিকূল ও অনুকূল পরিস্থিতিতে তিনি বার বার ভোটে জিতে গেছেন। ২০১১ সালে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে যান আইভী। পরে ২০১৬ সালে ধানের শীষের সাখাওয়াত ও সবশেষ এ বছরের ১৬ জানুয়ারী তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রায়শই নিজ দলের বিরুদ্ধেই লড়তে হয়েছে। সে কারণেই নানা কারণে বেশ অভিজ্ঞ আইভী। এসব কারণে আওয়ামী লীগের দলের সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আইভী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন।
রাজনীতি ছাড়াও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইভী বেশ নজির রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার সকল পুরানো রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সুবিধা গড়ে তোলা ছাড়াও তিনি বহু নতুন রাস্তা করেছেন। তিনি এমন সব জায়গা দিয়ে রাস্তা করেছেন যা অতীতে কেউ কল্পনাও করেননি। তার প্রতিটি পদক্ষেপে প্রবল বাধা এসেছে, কিন্তু তিনি ছিলেন অনড় ও অবিচল। তিনি এই শহরবাসীর জন্য এমন কিছু করে রেখে যাচ্ছেন যা কিনা এই শহরের নতুন প্রজন্ম বহুকাল পর্যন্ত সুফল ভোগ করবেন। সিটি করপোরেশনের নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়াও মেয়র আইভী বন্দর এবং সিদ্ধিরগঞ্জের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। ওই দুই এলাকায়ও তিনি রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বহু মেগা প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন। তিনি কেবল মানুষের স্বাচ্ছন্দে চলাচলের জন্য কেবল রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়নই করেননি বরং তিনি পরিবেশ বান্ধব শহর গড়ে তোলার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন। এই সিটি করপোরেশেনের পরিত্যাক্ত খাল, লেক ও পুকুরগুলো তিনি পুনরুদ্ধার করে রীতিমতো জনগনের বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলছেন। রক্ষা করেছেন সিটি করপোরেশন এলাকার খেলার মাঠগুলি এবং এসব মাঠেরও ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। জিমখানা লেককে শেখ রাসেল পার্কে রূপান্তর, বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধার ও ব্যাপক উন্নয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ খালের ব্যাপক উন্নয়ন, বন্দরের ত্রিবেনী খাল সহ অন্য খালের পরিবেশ বান্ধব ব্যাপক উন্নয়ন, মন্ডলপাড়া লেক সহ বহু খাল ও পুকুরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন এবং করেন মেয়র আইভী। তিনি কেবল স্বাচ্ছন্দে চলাচলের ব্যবস্থাই করছেন না বরং শহরবাসী যাতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছেন। তিনি প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্রের বাইরেও আরো একাধিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তাই এক কথায় বলা চলে মেয়র আইভী এক সময়কার গিঞ্জি শহর নারায়ণগঞ্জকে একটি বসবাসের উপযোগী স্বাস্থ্যকর শহরে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে যখন পুলিশের উপস্থিতি লোকজন টের পায় তখনই শত শত থেকে হাজারো মানুষ ভীড় করে দেওভোগের চুনকা কুঠিরের সামনে যেটা সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়ি। একের পর এক স্লোগানে উত্তাপ ছড়ায় বাড়ির চারপাশ। বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রবেশপথ। স্লোগান উঠে ‘দল মত বুঝি না আইভী তুমি জনতার’। এ স্লোগানে মাতোয়ারা পুরো এলাকা। পুলিশও আটকে যায় জনতার বাধায়। কিন্তু প্রায় ৭ ঘণ্টার বেশী সময় ধরে উত্তেজনার পর ৫ মামলার আসামী আইভী যখন বাড়ি ছাড়েন তখন দিয়ে বসেন আওয়ামী লীগের স্লোগান।
বলেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলায় যদি আমার শাস্তি হয় তাহলে আমি তা মাথা পেতে নেব। আমি তো কোন অন্যায় করিনি, চাঁদাবাজি করিনি, হত্যা করিনি। যখন নারায়ণগঞ্জের একটা মানুষও কথা বলতোনা প্রতিবাদ করতো না তখন ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ সহ সকল প্রতিবাদ আমি করেছি। আমি আপনাদের সেবা দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, নতুন সরকার এসেছে। আমি তো কোন অপরাধ করিনি তাহলে কেন আমাকে গ্রেপ্তার জানতে চাই সরকারের কাছে। আমার ভাইকে আমরা হারিয়েছি ১ মাস হয়নি, ৩টা ছেলে মেয়ে। এমন অবস্থায় আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, পালাইনি তবে কেন গ্রেপ্তার?
এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর ১৫ আগস্ট শহরের দুই নং রেল গেট এলাকাতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান আইভী। সেদিন তিনি শেখ মুজিবুরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
আপনার মতামত লিখুন :