আওয়ামী লীগের পদবিহীন নেত্রী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারের সংবাদে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়েছেন। নয় মাস যাবৎ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও আইভী ছিলেন নিজ বাড়িতে। হঠাৎ সাবেক রাষ্টপ্রতি আব্দুর হামিদ দেশের বাহিরে যাওয়া নিয়ে দেশে উত্তাপ শুরু হয়ে পড়ে। যার কারণে নয় মাস পর ছাত্র-জনতা আন্দোলনে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন আইভী এমন তথ্য জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কয়েক সমর্থক জানান, আইভীকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের নেতাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। যারা নিজ বা স্বজনদের বাড়ীতে অবস্থান করতেন তারাও এখন নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী বেশিভাগ নেতারা ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা হতাহত মামলায় আসামি হওয়া গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছেন। গত কয়েক মাস যাবৎ পালিয়ে থাকলেও রমজান ও ঈদে নারায়ণগঞ্জে ফিরতে শুরু করে ছিলো অনেক নেতারা। কিন্তু হঠাৎ চুনকা কুটির অভিযান চালিয়ে প্রভাবশালী নেত্রী ডা. আইভীকে গ্রেপ্তারে আওয়ামীলীগের নেতাদের মধ্যে আবার আতংক বিরাজ করছে।
বিগত ১৬ বছর ক্ষমতা থাকাকালে দাবড়িয়ে বেড়ানো নেতাদের সংখ্যা বেশি। সাবেক মন্ত্রী গাজী ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া রাঘবোয়ালরা পলাতক রয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আগে পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর ও উপজেলা থানা বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। ছাত্র-জনতা হতাহত শতাধিক মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন কর্মীরাও। তবে এসব নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন। বিচ্ছিন্ন কিছু দলীয় কর্মসূচি ছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব ছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে বিএনপি। শুরুতেই গা-ঢাকা দেন জেলা মহানগর ও থানা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের অনেকেই এত দিন নিজ নিজ বাড়িতে ছিলেন। এসব কর্মীও এখন মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একাংশ ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে শতাধিক মামলা হয়েছে। একেকটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও মেয়রদের নাম উল্লেখ ছাড়াও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এসব মামলায় কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ তা জানাতে পারেনি।
হত্যা, নাশকতাসহ একাধিক মামলা দায়েরের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত শেখ হাসিনার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। মোবাইল ফোন ও সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তাদের সাথে পাচঁটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও অধিকাংশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন। আড়াইহাজার ও বন্দরে কয়েকজন চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও জামিনে গা-ঢাকা দিয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী দেশের বাইরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু মূল দল নয়, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও লাপাত্তা। যারা এলাকায় অবস্থান করছেন, তারাও ‘অজ্ঞাতপরিচয় আসামি’ আতঙ্কে রয়েছেন। যে কাউকে যে কোনো সময় আটক করে যে কোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :