নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সমালোচিত নেতা জাকির খান কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার বাড়িতে ভিড় করছেন। সেই সাথে জাকির খানও বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতাদের দপ্তরে দপ্তরে ভিড় করছেন। আর জাকির খানের এই প্রতিটি পদচারণায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। নতুন করে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। তবে এই কোনো বিতর্কই যেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জাকির খান থেকে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। নেতাকর্মীরা আলোচনা সমালোচনা এড়িয়েই জাকির খানের দিকেই ভিড় করছেন। প্রায় প্রতিদিনেই জাকির খানের বাড়িতে নেতাকর্মীদের ভীড় জমছে। সেই সাথে কোনো কর্মসূচি থাকলে তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। জাকির খানকে সামনে রেখেই তারা বিএনপির রাজনীতি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন কারাভোগ করে জেল থেকে মুক্তির পর একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরতে চেষ্টা করছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। রাজনীতিতে সক্রিয় হতে তিনি যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং দেখা করছেন বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। তবে তার সকল কার্যক্রমই আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি করছে।
এরই মধ্যে কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের জাকির খানের মুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর ফেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে বেশ কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করেছেন।
জুলকারনাইন সায়ের জাকির খানের সাথে রুহুল কবির রিজভী ও বরকতউল্লাহ বুলুর ছবি পোস্ট দিয়ে কঠিন সমালোচনা করেছেন। তিনি তার ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে লিখেন, ‘যার গলায় রকউতল্লাহ বুলু ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন, তিনি ৪ টি হত্যাসহ ৩৩ টি মামলার আসামী জাকির খান, যিনি ২০০৩ সালে বিএনপির জোট নেতা খুনের ঘটনার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ২৬ টি মামলায় খালাসও পেয়েছেন। দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকার পর গোপনে দেশে ফিরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিচয় গোপন করে সপরিবারে বসবাস শুরু করলে ২০২২ সালে র্যাব তার বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপর জেলেই ছিলো জাকির খান। এ বছরের ৭ জানুয়ারী ববসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে জাকির খানসহ সব আসামি খালাস পেয়ে যান। এবং বেশ রাজকীয় অভ্যর্থনার মাধ্যমে জেল থেকে মুক্তিও পান তিনি। স্বেরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ বিভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে কারামুক্ত হয়েছিলো, তা নিশ্চই আপনারা আবগত আছেন। জোসেফ কুখ্যাত জেনারেল আজিজের মদদে তাদের অপর সহোদর শীর্ষ সন্ত্রাসী হারিস আহমেদ কি কি করেছিলো সেসবও আপনাদের অজানা নয়। তাহলে বিএনপির এই শীর্ষ ঠিক কি মনে করে জাকির খানের মতো একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর সাথে মাখামাখি করছেন? সন্ত্রাসীদের সাথে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কিসের আঁতাত?
তবে এই সমালোচনার পরও জাকির খানের দিকেই নেতাকর্মীরা ঝুঁকছেন। সবশেষ গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে জাকির খানের বাড়িতে নেতাকর্মীদের ভীড় দেখা গেছে। একসময় যারা তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করতেন তারাই এখন সেই জাকির খানকে বিভিন্নভাবে নিস্পাপ বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই সাথে জাকির খানের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ হয়ে পড়েছেন।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলোচিত সমালোচিত সেই জাকির খান কারামুক্তি লাভ করেন।
জাকির খানের এই কারামুক্তি উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন নারায়ণগঞ্জ কারাগারের সামনে ভীড় করতে থাকেন। সকাল ১০ টা নাগাদ বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী জড়ো হন। সাউন্ডবক্স, শত শত হোন্ডা ও গাড়ি নিয়ে কারাগারের সামনে জড়ো হন। বেলা ১১ টায় নারায়গঞ্জ কারাগার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই নেতাকর্মীদের মধ্যে হৈ হুল্লোড় পড়ে যায়।
সেই সাথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে শুরু করে শহড়জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। জাকির খানের অনুসারীরা শত শত হোন্ডা ও গাড়ি নিয়ে মহড়া দেন। যারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা সৃষ্টি করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চারটি হত্যা মামলা সহ মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র্যাব-১১ এর একটি অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান।
এর আগে ২০০৩ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট চলাকালীন সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কিনে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তবে দীর্ঘ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলে নারায়ণগঞ্জে তার অনুসারীরা জাকির খানের নামের আতঙ্ক বজায় রেখে ছিলো।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাকির খানের অনুসারীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করে। সেই সাথে এবার তার কারামুক্তির মাধ্যমে তার অনুসারীর সংখ্যা যেন শেষ নেই। প্রতিদিনই নতুন নতুন করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাকির খানের বলয়ে নাম লিখাচ্ছেন। জাকির খান ছাড়া তারা যেন অন্য কিছু বুঝছেন না।
আপনার মতামত লিখুন :