ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা এবং অবৈধ কিছু স্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আটকে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজের জট খুলেছে। খুব শিগগিরই এই সড়কের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে এর কাজ সম্পন্ন হবে।
৭ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি বলেন, এই কাজের পাশাপাশি আমরা সড়কটি গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন করতে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, এর ফলে যানজট দূর হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। এর আগে এক বছর পূর্বেই সড়কটির সাইনবোর্ড থেকে চাঁদমারী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সুফল পেয়ে আসছে নগরবাসী। কিন্তু চাঁদমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের মতোন সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে না পারায় সড়কটির এই অংশে যানজট লেগেই থাকতো। পাশাপাশি বড় বড় খানাখন্দে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগ বিষয়টি বারবার সমাধানের চেষ্টা করলে আসলেও বিভিন্ন কারণে তা আটকে ছিল।
সওজ সূত্রে জানা যায়, চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮.১৫ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (লিংক রোড) নামেও পরিচিত। সড়কটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই সড়কের পাশেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, জেলা কারাগার, গণপূর্ত অধিদফতর, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিজিবি-৬২, পিবিআই অফিস, পরিবেশ অধিদফতর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। এছাড়া সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার ভেন্যু হিসেবে সমাদৃত ছিল। যদিও ডিএনডির জলাবদ্ধতার কারণে বর্তমানে এই স্টেডিয়ামটি পানির নিচেই রয়েছে। ঢাকার পাশের এই অঞ্চলে সম্প্রতি অসংখ্য শিল্পকারখানা ও নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। ফলে বিদ্যমান সড়কে যানবাহন সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ১১ বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার একাংশ নিয়ে এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে বেসরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ বড় আকারের বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া লিংক রোডের উভয়পাশে রপ্তানীমুখী গার্মেন্টসসহ নানা শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। যে কারণে লিংক রোডটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। তবে ৫০ ফুট চওড়া সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পনার অভাবে যানজট লেগেই থাকতো। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির প্রস্থ খুবই ক্ষীণ। সড়কটি যে আয়তনের তার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে এ সড়কে। এসব কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ লিংক রোডটি যথাযথ মানে উন্নীত করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ডিপিপি প্রণয়ন করে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হলে সেটির অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন পায়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (আর-১১১) ছয় লেনে উন্নীতকরণে অনুমোদিত প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ টাকা।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ৮ কিলোমিটার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৪৮৯ কোটি ধরা হয়। তবে নির্ধারিত সময়েও প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এই কাজ এখনো আটকে আছে।
সওজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়াও এ সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর-লৌহজং-মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচে যাতায়াত করা যাবে। ৬ লেনে উন্নীত করার পর সড়কটির মোট প্রশস্থতা হবে ১৩৮ থেকে ১৪০ ফুট। ইতোমধ্যে শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড় নামক স্থানে একটি করে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য যানবাহন যেন থামতে পারে সেজন্য বাস-বে নির্মাণ করা হবে। জনগণের পারাপারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাইনবোর্ড ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সড়কটির মাঝখানে দুই মিটার চওড়া মিডিয়ান নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নানা প্রজাতির ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ রোপন করা হয়েছে। পুরো সড়কে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া করে উভয়পার্শ্বে সার্ভিস লেন থাকবে। সড়ক বিভাজক দিয়ে তা আলাদা করা হবে। সড়কের পাশ দিয়ে মানুষের পায়ে হেটে চলাচলের জন্য ফুটপাত থাকবে। সেখানে বাগান হবে। সড়কে যেন পানি না জমে তার জন্য আরসিসি ইউ ড্রেন, সসার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে সড়ক পার হওয়ার জন্য একটি ইউটার্ন থাকবে। ইতোমধ্যে ৯টি বক্স কালভার্ট স¤প্রসারণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :