নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর চার শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে ধারাবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্কুলটির শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তার বাসা থেকে তিন ছাত্রীকে উদ্ধার সহ অভিযুক্ত মিজানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মিজান বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার মৃত আবু তালেব শিকদারের ছেলে। বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মিজানুর রহমান মিজান বিকৃত রুচি সম্পন্ন মানুষ। সে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করতো ও পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলো। স্কুল বন্ধকালীন সময়ে প্রতি শুক্রবার স্কুলে আর্ট ও কম্পিউটারে ক্লাস করাতো। তার ছাত্রীদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে ৬ জুন দশম শ্রেণীর দুই ছাত্রী, ১১ জুন একই ক্লাসের এক ছাত্রী এবং ২৩ জুন আরও এক ছাত্রীকে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় নিয়ে আটকে ধারাবাহিক ধর্ষণ করে।
নাম গোপন রাখার শর্তে অভিযানে অংশ নেয়া এক পুলিশ সদস্য জানায়, ‘উদ্ধার করা শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। তাদের কেউ কেউ অভিযুক্ত শিক্ষককে কোন দোষ দিতে রাজি ছিলেন না। এমনকি তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে নিজেদের স্বেচ্ছায় বলে দাবী করছিলেন। তবে তাদের বয়স মাত্র ১৪ থেকে ১৫ বছর। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীর সাথে পরিণত ব্যক্তির এই আচরণ আইনগতভাবে দণ্ডনীয়।’
ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন শিক্ষার্থীর বাবার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এদের একজনকে তুলে নেয়া হয়েছে ৬ জুন ও অপর আরেকজনকে তুলে নেয়া হয়েছে ১১ জুন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘এই স্যার নামক পশু কম্পিউটার ক্লাস করাতো। আমরা তো ভালো মনে করেই সেখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। ৬ তারিখে আমার মেয়ে সহ তার এক বান্ধবী নিখোঁজ হয়। আমরা থানায় জিডি করলাম। আমাদের ফোন করে জানালো সে আসবে না আমাদের কাছে। ঠিকঠাক লোকেশনও দিচ্ছিলো না। এরপরেই ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়। এরপর একে একে মোট চারজনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকে এক মেয়ে বেরিয়ে বাড়ী ফিরে তার পরিবারকে সব জানায়। এরপরেই তার দেখানো লোকেশনে গিয়ে পুলিশ আমার মেয়ে সহ তিনজনকে উদ্ধার করে ও মিজানকে গ্রেপ্তার করে।’
চারজনকে কিভাবে ধারাবাহিক ভাবে নিয়ে গেলো এমন প্রশ্নে ভুক্তভোগীর বাবা দাবী করেন, ‘এই মিজান আধ্যাত্মিকতা (কালো জাদু) চর্চা করেন। সে এই মেয়েদের বশ করে তার কাছে নিয়ে রেখেছে এতদিন। মেয়েরা জেনেবুঝেই তার সাথে মোহাম্মদপুর চলে যেত। ৬ তারিখের পর সে আর স্কুলে আসতো না। পাগলার কাছাকাছি এসে মেয়েদের তুলে নিয়ে মোহাম্মদপুর নিয়ে যেত। আমরা এর কঠিন বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী আরেক মেয়ের বাবা বলেন, ‘ঘটনার পর আশেপাশের লোকজনের মাধ্যমে আমার মেয়ের খোঁজ করেছি। পরে জানতে পেরেছি এই স্যার তাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তার ঠিকানা না জানায় মেয়েকে উদ্ধার করতে পারছিলাম না। গতকালকে (মঙ্গলবার) এক মেয়ে ফিরে এসে সব জানালে আমরা পুলিশকে জানিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে আমার মেয়ে সহ তিনজনকে উদ্ধার করে আনি। আমরা ভুক্তভোগী চারটা পরিবার একত্রিত হয়ে একটা মামলা করেছি। এই মিজান খুবই ভয়ংকর। এর মত লোক কিভাবে স্কুলে শিক্ষকতা করে? মেয়েদের ব্রেন ওয়াশ করে তার কাছে নিয়ে যায়। ঢাকাতেও তার নামে ধর্ষণ মামলা আছে।
স্কুলের চারজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ধারাবাহিক ধর্ষণের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, এই লোক আমাদের শিক্ষক না। সে ২৪ সালের দিকে সাবেক প্রধান শিক্ষকের সহযোগীতায় স্কুলে আর্ট ও কম্পিউটার শিখাতো। গত বছরের জুলাই মাসেই তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপরে আমার ছাত্রীদের সাথে তার কি সম্পর্ক তা আমার জানা ছিলো না।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী এক পরিবার থানায় জিডি করেছিলো। বাকিরা আইনের আশ্রয় নেয়নি। আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের লোকেশন শনাক্ত করতে, কিন্তু তাতে সক্ষম হইনি। মঙ্গলবার সেখান থেকে এক মেয়ে ফিরে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানালে মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে আটকে থাকা তিন মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেই সাথে আটক করা হয় অভিযুক্ত মিজানকে। বুধবার তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার একটি থানাতেও পর্ণগ্রাফি ও ধর্ষন মামলা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :