News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

বন্দরে ৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১০:১৩ পিএম বন্দরে ৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতি

চার ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে বন্দরের বিএনপির রাজনীতি। বন্দর থানাধীন ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে থানা কমিটি গঠিত। যার সব গুলো ইউনিটই নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির আওতাধীন। তবে উপজেলা ও থানা ইউনিট কমিটিতে নেতৃত্ব নিয়ে পুরোপুরি ভাবে ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বন্দর বিএনপি, কোনো কোনো দৃষ্টিকোন থেকে ৫ ভাগেও বিভক্ত বলা যেতে পারে। যার নিজ দলের নেতাদের মাঝে অনৈক্য ও বিভেদের কারণে বিভক্ত বিএনপি সাংগঠনিক কার্যকমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে দেখা দিছে একের পর এক ব্যর্থতা। সেই সাথে ঘটছে অনাকাঙ্খিত অনেক ঘটনা। একজন পক্ষ আরেক পক্ষে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি জমি দখলে অভিযোগ তুলছেন, কেউ বা আবার অন্যপক্ষে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী বলে আখ্যায়িত করছেন। তবে এসব সমস্যা উত্তরণে যাদের সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কথা সেই মহানগর বিএনপিকে জোড়ালো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ বিভেদমান নেতাদের। এমনকি বন্দর এলাকায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর হামলা সহ তাকে বেদম পিটুনি দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ আহম্মেদকে এক সময় বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করতেও দেখা গিয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালে সুযোগে ওয়ার্ড নেতাদের ম্যানেজ করে ভোটে মাধ্যমে বন্দর থানা বিএনপি সভাপতি নির্বাচিত হন। বিএনপির সুবাতাসে শাহেনশাহ একক কৃতিত্ব দেখা গেছে। অন্যদিকে গত বছর একটি হত্যা মামলায় দীর্ঘ সময়ে কারাগারে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা। ওই সময় বন্দর থানা বিএনপিকে একক ক্ষমতায় ঘিরে রেখেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা বিগত দিনে যুবদল করলেও আন্দোলন সংগ্রামে নিস্ক্রিয় ভূমিকাই পালন করার অভিযোগ রয়েছে। বহিস্কৃত বিএনপি নেতা মুকুলের সাথে বিরোধীতা থাকায় তার ভাই রানাকে এই দায়িত্ব তুলে দেন সাখাওয়াত-টিপু। বন্দর থানা এলাকায় বিএনপির রাজনীতিতে তারা তাদের কমিটি একক নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে তাদের বিদ্রোহী বিএনপি গ্রæপ রয়েছে। যারা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এর ছেলে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক আবুল কাউসার আশা সমর্থক নয় আতাউর রহমান মুকুল সমর্থক।

অন্যদিকে বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় বন্দর উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। কিন্তু সেখানেও তাদের একক নিয়ন্ত্রণ নেই। বন্দর উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে তাদের বিরুদ্ধে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য শাহীন আহম্মেদ এর নেতৃত্বে একটি প্রতিপক্ষ দাঁড়িছে। শাহীন আহম্মেদের সাথে রয়েছে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (প্রস্তাবিত) তাওলাদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া সহ একধিক ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদধারীরা। বিভিন্ন সময় তারা বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে তাদেরকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মহানগরের শীর্ষ নেতাকে জড়িয়ে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য আসে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত গড়ায়। সে সময় বিষয়টি মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হলেও স্থায়ী সমাধানে পৌছাতে পারেনি।

সব শেষ ২১ জুন ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ওই আলোচনা সভায় অনুপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরন ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, এর আগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে শাহিন আহম্মেদ এর নেতৃত্বে অনেক জলগোলা করা হয়েছে। নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই বিষয়টি মহানগরের নেতৃবৃন্দরা দুপক্ষে নিয়ে বসে একটি সমাধানে আসতে পারতো। কিন্তু উনারা সেটা করেনি। বরং বন্দর উপজেলা কমিটির আওতাধীন ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির ব্যানারে যে অনুষ্ঠানে উনারা এসেছেন সেখানে ইউনিয়নের সভাপতিকেও রাখা হয়নি, মহানগরের নেতৃবৃন্দদের উচিত ছিল অন্তত এখানে আসার আগে এসকল সমস্যার সমাধান করা কিন্তু উনারা সেটা না করাতে হয়তো উপজেলার শীর্ষ দুই নেতা ধামগড় ইউনিয়নে মহানগরের দুই শীর্ষ নেতা আসার পরও অনুপস্থিত ছিলেন।

এ সব কিছুর বাইরে বন্দরে বিএনপির রাজনীতিতে আরো একটি শক্ত বলয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে বন্দরের জালাল হাজী পরিবার। ওই পরিবারের বর্তমান বয়োজেষ্ঠ্য সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, এরপরই আছে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আতাউর রহমান মুকুল ও ২৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর ছাত্রদল ও সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশা। বন্দর থানা এবং উপজেলা সর্বত্রই তাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন এলাকায় বিএনপিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এক কথায় বলা যেতে পারে সমগ্র বন্দর এলাকায় বন্দর থানা এবং উপজেলা কমিটির বাইরে থেকেও কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বকে একাই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়ার মত সামর্থ্য রয়েছে এই পরিবারের। তবে শোনা যাচ্ছে গত ৫ আগস্টের পর এই পরিবারে মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। চাচা আতাউর রহমান মুকুল ও ভাতিজা আবুল কাউসার আশার মাঝে নেতৃত্বের ঠান্ডা লড়াই চলছে। তবে চাচা ভাতিজার মধ্যে দ্ব›দ্ব থাকলেও তাদের দুজনের যেসকল অনুসারী রয়েছে তারা সবাই একই পরিবারের রাজনীতি করেন এবং সকলেই একবাক্যে সাবেক এমপি আবুল কালামের ডাকে যে কোন মুর্হুতে মাঠে ঝাপিয়ে পড়ার নজির রয়েছে।

Islam's Group