মানুষকে কষ্ট দিয়ে শামীম ওসমান আনন্দ পেতেন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশে ৫ আগস্টের মতো একটা ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মানুষ দুর্নীতি, দুঃশাসন ও জুলুম থেকে মুক্তি পেয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্নের চিন্তার জায়গা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে এখন নির্বাচনের আবহাওয়া আমরা পাচ্ছি। সে নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী সারাদেশে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। ওই প্রার্থীর তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আমাকে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমি জনগণের কাছে জানানোর চেষ্টা করছি যে আমরা কি করতে চাই, কিভাবে এ রাষ্ট্রটাকে মেরামত করতে চাই। সেসব বিষয় মানুষের কাছে আমরা উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।

গেলো ৬ মাসে রূপগঞ্জ-বন্দর ৬টি হত্যার ঘটনার বিষয় আব্দুর জব্বার বলে, নিজের দলের মধ্যে যখন হত্যার ঘটনা ঘটে সেটাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলা যায়না। এটা হচ্ছে নিজের অবস্থান দলে মজবুত করা। নিজের আখের গোছানোর জন্য অন্যকে ঘায়েল করে নিজের অবস্থানকে শক্ত করার লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি মরিয়া হয়ে যায় তখন তার মধ্যে ভালো-মন্দ সত্য-অসত্য, খুনখারাপি, রাহাজানিতে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।

কারো সাথে নিজের মতের অমিল হলে ক্ষতি করতে হবে, গোষ্ঠীসহ এলাকা ছাড়া করতে হবে, মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে হবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব বিষয়ে শুধু রাজনৈতিক দল নয় প্রশাসন, সরকার ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব আছে। এজন্য সবাই সম্মিলিতভাবে যদি এগুলোর বিপরীতে দাঁডাতে না পারি তাহলে আরও কতো কাল আমাদের এগুলোর মধ্যে থাকতে হবে আমরা বলতে পারবো না। এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা হয়েছে। যা বিএনপির ভাইয়েরা করেছে। বিএনপির ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলা, আপনাদের যদি মানুষ ম‚ল্যায়ন করে গ্রহণযোগ্যতায় রাখে, আপনি যদি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন এরপর তো মানুষ ভেবে নিবে আপনার বিকল্প নেই। তখন আপনাকেই তো নেতা বানাবে। সেক্ষেত্রে আমার কাজে তো আপনার বাধা দেওয়ার কথা না। এটাতো আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে যা এখন হওয়ার কথা ছিল না।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সুসম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলে, এখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা আছে তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে আমরা একসাথে রাজনীতি করেছি, কারাগারেও আমরা একসাথে ছিলাম। একেঅন্যের সাথে কথা ভাগাভাগি করেছি। ফলে এখনো আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে নেতা পর্যায়ের মানুষ যখন নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে বিভিন্ন মানুষকে পালবে তখন যাচাই-বাছাই করে পালা উচিত। কারণ সব লোক তো আর ভালো হবে না। আর সেই ভালো না হওয়ারর কারণেই তারা বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল পাকায়। যার ফলে আমাদের সুসম্পর্কেও মাঝেমধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা থাকবেন তাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার দলীয় লোকজন কেমন বিতর্কিত কিনা।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকা সত্তে¡ও জামায়াতে ইসলামকে জনগণ কেনো ভোট দিবে? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি জানান, প্রত্যেক দলের জাতির প্রতি একটা কমিটমেন্ট থাকে। আমাদের কমিটমেন্ট হচ্ছে আল্লাহর আইন চাই সৎ লোকের শাসন চাই। বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের মানুষ মনগড়া ইচ্ছেয় শাসিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের যা পাবার কথা সেটা মানুষ পায়নি। যেমন দলীয় কোন্দল, অপর রাজনৈতিক দলের উপর হামলা ক্ষমতায় আসলে তা ধরে রাখা। ম‚লত এইসব চিন্তা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই হচ্ছে দেশ এবং জাতির প্রতি তাদের কোনো কমিটমেন্ট ছিল না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো নেতার রাজনীতি করে না। আমরা রাজনৈতিক কল্যাণের। আল্লাহতালার বিধান অনুসারে এ সমাজ এটা রাষ্ট্রনীতি,সমাজনীতি এবং অর্থনীতি সবকিছু পরিচালিত হয়। এখানে ধর্ম-বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। জামায়াতে ইসলামের কথা আর কাজে মিল থাকে। এজন্যই জামায়াতে ইসলামীকে জনগণ ভোট দিবে।

ফতুল্লার জলবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ফতুল্লায় অন্তত ৭-৮ লাখ মানুষ জলবদ্ধতায় ভোগান্তিতে থাকেন। আমরা ইতোমধ্যে অসুবিধার স্থানগুলো নির্ধারণ করেছি। ২০-২২ টা জায়গায় নির্ধারিত করা হয়েছে। সেসব জায়গা গুলোতে আমরা ড্রোন শ্যূট, অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফুটেজ নিয়ে মানুষের জনজীবনের ভোগান্তি নিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরকারের বিভিন্ন মহলে আলাপ করেছি। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের কিছু প্ল্যান ছিল সবমিলিয়ে বলা হয়েছে জুলাইয়ের শুরু থেকে ৫টি খাল খনন শুরু হবে। এবং খালগুলো গভীরভাবে করবে। যে পাঁচটির কথা বলা হয়েছে সেগুলোর কাজ যদি ঠিকঠাকভাবে হয় তাহলে আমরা আশা করছি মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

শামীম ওসমান ফতুল্লায় গিয়ে পানিতে সাদা কাপড় ভেজাতেন আর বলতে আমি এটা করবো, সেটা করবো যার বাস্তবে কিছুই হয়নি। অথচ তার সক্ষমতা ছিল এবং তার দলের কাছে তার দাপটও বেশি ছিল। এটা চাইলেই সে করতে পারতো। কিন্তু কেনো তিনি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে সেটা তিনিই বলতে পারবেন। ম‚লত মানুষকে কষ্ট দিয়ে শামীম ওসমান আনন্দ পেতো। আর আমরা মানুষকে শান্তি এবং স্বস্তি দিয়ে খেদমত করার সুযোগ পেলে দুই একবছরের মধ্যে ফতুল্লাবাসীকে ইনশাল্লাহ জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিবো।

নিজে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না হয়েও এখানে রাজনীতি করার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের পদে থাকাকালীন সময়ে ঢাকায় ছিলাম। এরপর দীর্ঘদিন ধরে আমি সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়ে বসবাস করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আমি বাংলাদেশের বাসিন্দা। আমি এখানে থেকে মানুষের খেদমত করতে আগ্রহী।