News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

অস্ত্র হাতে ওসমানলীগ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০১:১৩ পিএম অস্ত্র হাতে ওসমানলীগ

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ব্যক্তি ছিলো শামীম ওসমান। তিনি সর্বমহলেই গডফাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই সাথে তিনি সহ তার অনুসারীরা অস্ত্র প্রদর্শনীতেও সেরা ছিলেন। কথায় কথায় তিনি অস্ত্রের কথা বলতেন। অস্ত্র নিয়ে অহংকার করতেন। আইন-শৃঙ্খলার বিভিন্ন পোগ্রামেও প্রকাশ্যে নিজের অস্ত্রের বিবরণ দিতেন।

সবশেষ গত বছরের জুলাইতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের শামীম ওসমান সহ তার অনুসারীরা অস্ত্রের মহড়া দেখিয়েছেন। যেখানে তার ছেলে ওয়ন ওসমানও বাদ যায়নি। যা এখনও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে উঠছে। একই সাথে এই অস্ত্র প্রদর্শনীই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সাথে সাথে তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধ ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালিন সময়ে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়কে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। আর ওই মিছিলে শামীম ওসমান ও তাঁর কয়েক শতাধিক অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকার দিকে ধাওয়া দিয়েছিলেন। 

সেখানে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ (টিটু) গুলি ছোড়েন। শামীম ওসমানের আত্মীয় (অয়ন ওসমানের শ্বশুর) ফয়েজ উদ্দিন (লাভলু), তাঁর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ও শীতল পরিবহনের বাসের পরিচালক অনুপ কুমার সাহা, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলামকে দেখা গিয়েছিলো। পাশাপাশি তার ছেলে ওয়ন ওসমান, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও আহমেদ কাউসার অনেকেই ছিলেন। এই মহড়ায় যারা ছিলেন তাদের বেশিরভাগ হাতেই অস্ত্র দেখা গেছে।

ওই সময়ে কয়েক দিনের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এই অস্ত্র মহড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে শামীম ওসমান গর্ব করে বলেছেন। তিনি নিজেই স্বীকারোক্তি দিতেন তিনি ও তার ছেলে মিলে ৩০ হাজার রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন যা আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছিলো।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে যত জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার এসেছেন সকলেরই যোগদানের পরপরই নামমাত্র বিভিন্ন ইস্যুতে বিশাল সমাবেশের ডাক দিতেন শামীম ওসমান। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে টানা মাসজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হতো। আর এই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডিসি এবং এসপিকে উদ্দেশ্য করে নিজের ক্ষমতার জানান দিয়ে বিভিন্নভাবে বক্তব্য রাখতেন। বক্তব্যে প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতেন কিন্তু পরোক্ষভাবে ডিসি এসপিকে হুমকিতে রাখতেন।

সবশেষ ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে আয়োজিত অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন প্রত্যাশার আত্মপ্রকাশ ও মাদকের বিরুদ্ধে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কথা বলা হলেও এটা ছিলো শামীম ওসমানের স্ট্যান্টবাজি। এই মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে মাসজুড়েই বিভিন্ন সভা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো প্রশাসনকে নিজের অবস্থান জানান দেয়া।

কিন্তু এই বিষয়টি তৎকালিন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বিষয়টি উপলব্দি করেন। ফলে তারা দুইজনের কেউই উপস্থিত হননি। কিন্তু এই উপস্থিত না হওয়া নিয়ে শামীম ওসমান অনেক ক্ষোভ ঝাড়েন।

তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও ভূমিদস্যুতা বন্ধে আজকের এই আয়োজন। এখানে অংশ নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম; এরপরও তারা আসেননি। তারা কেন আসেননি তা সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাইব। মনে রাখবেন আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারও দয়ায় চলি না। একই সাথে মতবিনিময় উপস্থিত হওয়া অন্যান্য বক্তাদের দিয়েও ডিসি এসপির বিরুদ্ধে বলানোর চেষ্টা করানো হয়।

এর আগে ২০২০ সালের ১ মার্চ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘২০০১ সালের আগে পুরো জেলা পুলিশের ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল। মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু আজকে আমার গাড়িতেও অস্ত্র আছে কি না, আমি জানি না।’ পরবর্তীতে তার এই বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ টনক নড়েছিলো।

এদিকে যারা শামীম ওসমানের অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলো তাদের প্রায় সকলেরই বিভিন্ন সময় অস্ত্র প্রদর্শন করতেন। ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তার নিজ দলীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে হকারের সংঘর্ষের দিনও শামীম ওসমানের অনুসারীরা অস্ত্র প্রদর্শন করে গুলি ছুড়েছিলেন।

Islam's Group